গারাদিয়া গ্রামে কৃষক নেতৃতে বোরো ধানের প্রায়োগিক গবেষণা
মানিকগঞ্জ থেকে মো. মাসুদুর রহমান
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার গাড়াদিয়া গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা চলতি বছরের বোরো মৌসুমে (২০১৫/১৬) স্থানীয় উপযোগি ধানজাত নির্বাচনের লক্ষ্যে লাফা, ময়নাটিয়া, জেসমিন, কুচমুচ, মকবুল, এম ৩৩১-১, এম ডিডেট ও এম-২৫২ ধান জাত নিয়ে নিবিড় ধানচাষ পদ্ধতি (এসআরআই) ও জৈব পদ্ধতির মাধ্যমে বোরো ধানের প্রায়োগিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
গারাদিয়া গ্রামের কৃষকরা নিজেদের পরিচালনায় এই প্রায়োগিক গবেষণায় শুরু থেকে তারা আগ্রহী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কৃষকরা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে ধান গাছের গড় উচ্চতা, জমিতে পানির পরিমাণ, বিভিন্ন পর্যায়ে কুশির সংখ্যা, কাইচ থোড় ও ফুল ফোটার তারিখ, রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করেন। কৃষকরা পরীক্ষণ প্লটে উপরি সার প্রয়োগ হিসেবে ভার্মি কম্পোস্ট এবং গাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অমৃত কোরাজল (আখের গুড়, গোচনা ও তাজা গোবরের মিশ্রণ) ব্যবহার করেন। পাশাপাশি আইপিএম চর্চার মাধ্যমে জমিতে উপকারি পোকা সংরক্ষণের উদ্যোগও গ্রহণ করেন।
প্রত্যেকটি ধান জাতের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশে জাতটি নিজেকে টিকিয়ে রাখে। কৃষক পরিচালিত এই গবেষণা দলের আহবায়ক ও অন্যতম সংগঠক কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, এ বছর হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে মাঠের অধিকাংশ ধান আংশিক ও সম্পূর্ণ হেলে পড়ে কিন্তু গবেষণাধীন ধানজাতগুলো সোজা অবস্থায় ছিল। তিনি বলেন, “পর্যাাপ্ত জৈব সার প্রয়োগে পোকার আক্রমণ হয় নাই এবং অন্যান্য জমির তুলনায় পানি কম লেগেছে।”
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে গবেষণা প্লটি পরিদর্শন করেন। এছাড়া বায়রা ইউনিয়নের ২টি কৃষক সংগঠনের ৩৫ জন কৃষক সদস্য গবেষণা প্লটটি পরিদর্শন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় জন্য গারাদিয়া গ্রামে আসেন। গবেষণা মাঠ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গ্রামের ১১ জন কৃষক এবং ২৩ জন কৃষাণী অংশ নেন। গবেষণাধীন জাতের মধ্য থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ৬ ধরনের ধানজাত তারা নির্বাচন করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কৃষাণী রাশেদা বেগম জানান, মকবুল জাতটিতে সর্বোচ্চ শতাংশ প্রতি ৩৮ কেজি ফলন হয়েছে এবং এই ধানের শীষের দৈর্ঘ্য ২৬ সে.মি, প্রতি শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা ১৬৫টি ও চিটার সংখ্যা ১৮টি। মাঠ দিবসে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনাকারী কৃষকগণ তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আগ্রহী কৃষকদের বীজ সরবরাহের ঘোষণার মাধ্যমে মাঠ দিবসের সমাপ্তি হয়।