কেমন আছেন মানিকগঞ্জের নকশি কারিগররা
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ॥
সুই-সুতা দিয়ে কাপড়ে বাহরি আল্পনা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানিকগঞ্জের নকশি কারিগররা। তারা কাপড়ে আর্কষণীয় ডিজাইন আর নকশা বসিয়ে তৈরি করছেন পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়ি, ফতুয়া, বেবি ড্রেসসহ নানা পোশাক। আর এই কাজের বেশিরভাগ কারিগর হচ্ছেন গ্রামীণ নারী। তাদের নিখুঁত হাতে তৈরি এসব পোশাকে লাগানো হচ্ছে নামিদামি ব্যান্ডের স্টিকার, যা শোভা পাচ্ছে রাজধানীর বড় বড় মার্কেটের শোরুমে।
বিভিন্ন হিসাব মতে, জেলায় ৩০ হাজারের বেশি নকশির কারিগর রয়েছেন। বেশ কয়েকবছর ধরে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নকশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, মনামি, নকশি, ইউসুফ ইব্রাহীম হ্যান্ডিক্রাপ্ট, শঙ্খনীল, মাইক্রাফট, জননী ক্র্যাফট অ্যান্ড ফ্যাশন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার নকশি কারিগর সারাবছরই তৈরি করেন পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস ও বেবি ড্রেসসহ আকর্ষণীয় পোশাক। কিন্তু ঈদ এলে এসব পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রত্যেক বছর ঈদের সময় নকশি কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করেন। এই ঈদেও একই অবস্থা। পাঞ্জাবি-ফতুয়া-শাড়িতে এখন সুই-সুতার নকশি আঁকতে দিন-রাত ব্যস্ত এসব কারিগর।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখন বাড়ির সব উঠানে চোখে পড়বে কারিগরদের ব্যস্ততার এই দৃশ্য। আর সুই-সুতার বেশিরভাগ কাজ করেন গ্রামীণ নারীরা। তাদের নিপুণ হাতের এই কাজের কদর জেলার গণ্ডি পেরিয়ে রয়েছে সারাদেশেই। অভিজাত বিপণিবিতান আড়ং, বুনন, অঞ্জনস, কে-ক্রাফট, দেশাল, পালকি, ফড়িং, নবরূপা, বাংলার মেলা, গ্রামীণ চেক, রঙ, আবর্তনসহ দেশের নামিদামি সব প্রতিষ্ঠানে চলে যায় মানিকগঞ্জের তৈরি এসব বাহারি পোশাক। এবার ঈদ উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়া, থ্রি-পিস ও বেবি ড্রেসের লক্ষাধিক পোশাক।
জান যায়, এবার ঈদে শুধুমাত্র মানিকগঞ্জ আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন থেকে আড়ংয়ে যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার নকশির কাজের পোশাক। এর মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্যালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, বেবি ড্রেস ও হাউজ হোল্ড।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার শঙ্খনীল ফ্যাশন কারখানার নকশি কারিগর সালমা বেগম জানালেন, সারাবছর নকশা তোলার কাজ করলেও প্রতিবছর ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়।
এই কারখানার আরেক নকশি কারিগর নাদিয়া বলেন, “আমাদের হাতে তৈরি পোশাকের কদর আমরা তেমন বুঝি না। যখন মানুষজন এই পোশাকগুলো বড় বড় শোরুম থেকে কিনে ব্যবহার করেন তখনই আমরা বুঝতে পারি এগুলো আমাদের হাতে তৈরি।”
শঙ্খনীলের পরিচালক রজনী খান রুম্পা বলেন, “আমাদের এখানে গ্রামীণ নারীদের দিয়ে পাঞ্জাবি, শাড়ি, কামিজ ও ছোটদের বিভিন্ন ধরনের পোশাকে নকশির কাজ করা হয়ে থাকে। আমাদের এই পোশাকগুলো দেশাল ও মেঠোপথে পাঠানো হয়।”
মাই ক্রাফট ফ্যাশনের পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, “আমাদের নিজস্ব পোশাকের প্রডাক্টগুলো ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। মানিকগঞ্জের শো-রুমেও বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ ও ছোটদের পোশাক।
মানিকগঞ্জ ব্র্যাক আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন জানান, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কোয়ালিটি ঠিক রেখে এসব পোশাক তৈরি করা হয়। ভালো কোয়ালিটির কারণেই মানিকগঞ্জের নকশি করা পোশাকের চাহিদা বেশি। ঈদের সময় এসব পোশাকের কদর বেশি থাকে। এবার প্রায় ৮০ হাজার পোশাক মানিকগঞ্জ থেকে শুধুমাত্র আড়ংয়েই যাচ্ছে।