চুলেই ভাগ্য ফিরেছে মজিদুলের !
তানোর, রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার,
রাজশাহীর জেলার তানোর চন্দনকোঠা গ্রামের মজিদুল ইসলাম এলাকায় চুল ব্যবসা (প্রক্রিয়াজাতকরণ)করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাবার অভাবের সংসার লেখাপড়া করা হয়নি তার। দিনমজুরির কাজ পেলে খাওয়া জুটতো। তাই বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে বসে মনের দুঃখে কেঁদেছিলেন মজিদুল। একদিন চুল ফেরিওয়ালা আছাদ আলীর পরামর্শে তিনি নেমে পড়েন এই চুল ব্যবসায়। তারপর চুলেই ভাগ্য ফিরেছে মজিদুলের।
প্রথমে ছিলেন দু’টাকার ফেরিওয়ালা। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মেয়েদের মাথার উচ্ছিষ্ট চুল কিনতেন। বিনিময়ে তাদের দিতেন মাথার ক্লিপ, চুরি, ফিতাসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র। তারপর চুল নিয়ে ব্যবসার ভাবনা থেকে তিনি ঢাকায় যান। ৩দিনের চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। ৭ দিনের মাথায় বাড়িতে প্রথমে চুল ফাটানো প্রশিক্ষণ দেন তার স্ত্রীকে। এরপর ১০ কেজি চুল নিয়ে যান ঢাকায়। বিক্রি করেন ৫০ হাজার টাকার চুল। বিক্রি দেখে মজিদুলের মুখে হাসি ফোটে। ওই চুল বিক্রি করে আয়ও আসে ত্রিশ হাজার টাকা। এরপর পুরোপুরি চুল ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি।
প্রথম বছর নিজ পাড়ায় একটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যেখানে কাজ করেন ২০ থেকে ২২জন নারী শ্রমিক। তাদের ১০০ গ্রাম চুলের কাজ করলে দেয়া হতো ৫০ টাকা। এভাবে ১৫ বছরে এখন তার ১৫টি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে অতন্ত ৬শত নারী শ্রমিক কাজ করেন। নিজ বাড়িতে পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন ১০জন। এভাবে তার ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। চুল ব্যবসার টাকায় কেনেন দুই বিঘা জমি। বানান বাড়ি। বর্তমানে তিনি ১৫ কাঠা জায়গায় লিচু বাগান করেছেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেকেই এখন ঝুঁকেছেন তার এই চুল ব্যবসায়।
তিনি ঢাকায় বিদেশী (চায়না) চুল ব্যবসায়ীর কাছে চুল বিক্রি করেন। এছাড়া নওগাঁ, রাজশাহী থেকেও তার কাছে চুল বিক্রি করতে আসেন চুল ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে মজিদুল গড়ে প্রতিদিন এক লক্ষ টাকার চুল কিনেন। সপ্তাহে ঢাকায় চুল নিয়ে যান প্রায় ৭ লক্ষ টাকার।
মজিদুল জানান, ১৫টি কেন্দ্রে ১৫ জন নারী রেখেছেন। তারা চুলের কাজ দেখভাল করেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ পেলে তার এই ব্যবসা আরও প্রসারিত করতে পারবেন। যদিও সম্প্রতি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) তানোর শাখা তার এই চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা দেখে বিনা জামানতে ১ লাখ ঋণ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হলে ব্যবসাটা আরও ভালো হতো। এই চুলের ব্যবসা করেই তার সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।