সাম্প্রতিক পোস্ট

ডাক্তারের বাপ ডাকলেই খুশি হন আবু বক্কর সিদ্দীক

ডাক্তারের বাপ ডাকলেই খুশি হন আবু বক্কর সিদ্দীক

সাতক্ষীরা থেকে মাহিদা মিজানঃ 

সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিবাসী আবু বক্কর সিদ্দীক। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট একটি পরিবার। সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরে তাঁদের বাস। দারিদ্র্য পরিবারটিকে গ্রাস করেছিল। কিন্তু চরম দরিদ্র্র্যতার সাথে লড়াই করে আজও টিকে আছে পরিবারটি।

প্রথম জীবনে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের একজন সাধারণ শ্রমিক ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দীক। তাঁর বেতন ছিল খুবই সামান্য। এই সামান্য বেতন দিয়ে তার পরিবার ঠিকমতো চলতো না। চরম দরিদ্র্যতার মধ্যে থেকেও তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন তার ছেলেরা একদিন সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তাদের অনেক নামযশ হবে। তারা অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। আর এ কারণেই তিনি চরম দরিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে গেছেন।

Satkhira
টেক্সটাইল মিলের সামান্য বেতন দিয়েই তিনি ছেলেদের স্কুলে ভর্তি করান। তিনবেলা ঠিকমতো খেতে না পারলেও কখনও ছেলেদের লেখাপড়া বন্ধ করেননি। কিন্তু বিধিবাম! একসময় তার চাকরিটা চলে গেল। তাতেও তিনি হার মানেননি। এরপর কেয়ারটেকার হিসাবে শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ নিলেন। সারাদিন বিভিন্ন বাসা-বাড়ি দেখাশোনা করে তিনি যে টাকা পেতেন তা দিয়েই কোনভাবে চলতে লাগল তার সংসার। পাশাপাশি তিনি ছেলেদের লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁর বেতনের কিছু টাকা এবং পরিচিত লোকদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ২০০৮ সালে তার বাড়ির পাশে গড়ে তুললেন একটি ছোট মুরগির ফার্ম।

Satkhira1
প্রথমে ১৫০টি মুরগি দিয়ে তিনি শুরু করেন তার মুরগির ফার্ম। এর পাশাপাশি তিনি বাসা-বাড়ির কেয়ারটেকারের কাজও চালিয়ে যেতে লাগলেন। এর মধ্যে তার বড় ছেলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ+ (প্লাস) পেল। চরম দারিদ্র্যতার মধ্যেও যেন তিনি আশার আলো দেখতে পেলেন। তিনি আরও কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলেন। মুরগির ফার্মের পরিধি তিনি ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি করতে লাগলেন। পাশাপাশি লাভের টাকা দিয়ে একটি গরুও কিনলেন। এরই মধ্যে ২০১১ সালে তার বড় ছেলে বরিশাল মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে গেল। তার আনন্দের কোন সীমা রইল না।

Satkhira4
তিনি তার সামান্য সেই আয় দিয়েই তার বড় ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করালেন। বর্তমানে তার ছেলে এমবিবিএস পাশ করে ইর্ন্টানিং করছে। তার স্বপ্ন ছেলে একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে। নিজেকে দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত করবে।

পাশাপাশি তিনি তার ছোট ছেলেকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন দেখেন। তার ছোট ছেলেটিও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সে পিএসসি ও  জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন গোল্ডেন এ+ (প্লাস) সহ ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি পেয়েছে। বর্তমানে সে এসএসএসি পরীক্ষার্থী। তিনি চান তার ছোট ছেলেও বড় ছেলের মত বড় ডাক্তার হবে। আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, “আমার কোন চাওয়া নেই। সবাই আমাকে ডাক্তারের বাপ বলে ডাকলেই আমি খুশি হবো।”

happy wheels 2

Comments