বদলে যাওয়া মানুষ আসকান আলী
বরেন্দ্র অঞ্চল-তানোর থেকে অসীম কুমার সরকার
মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মনোবলের। জীবনের পথ যতই বাধাগ্রস্ত হোক, সৎ, সাহসিকতা আর অনুপ্রেরণায় বদলে যেতে পারে জীবনের সকল বাধা-পঙ্কিলতা। তেমনি এক বদলে যাওয়া মানুষ আসকান আলী। তানোর পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত মলু মন্ডলের ছেলে আসকান আলী। ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের সংসার তার। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তারা যে যার মতো ঘর-সংসার করছেন। আসকান আলী ও স্ত্রী রমেছা দৈনিক কাজকর্ম করে কোনমতে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন-সংসার।
এক সময় আসকান আলী মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ছিলো তানোর থানায় মামলা। জেল খেটেছেন বহুবার। ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি এরশাদ শিকদারকেও দেখেছেন বলে জানান। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে পাল্টে গেছে তার পেশা। মাদকসেবক ও বিক্রেতা আসকান আলী আজ হাটে-বাজারে ফেরি করে বিক্রি করেন ঝাটা, বাড়–ন। বদলে গেছে আসকান আলীর চালচলন ও কথাবার্তা।
মাদক ব্যবসা ও সেবন ছেড়েছেন ১০ বছর পূর্বে। আজ দশজন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের একজন তিনি। ৭০ বছর বয়সী আসকান আলী নিজের ইচ্ছায় ও গ্রামবাসীর কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে সর্বপ্রথম ৪ হাজার মূলধন নিয়ে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর পর থেকে তিনি পিছন ফিরে তাকাননি। গোল্লাপাড়া মৎস্যবাজার থেকে মাছ কিনে সাইকেলযোগে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ তিনি গত এক বছর থেকে ঝাটা, বাড়–নের ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রতিদিন ভোরবেলায় তিনি ঘুম থেকে উঠে গোল্লাপাড়া ক্লাব ঘরের বাইরে বসে বসে ঝাটা ও বাড়–ন বাঁধেন। তারপর বেরিয়ে পড়েন বিক্রি করতে হাট-বাজারে। প্রতিদিন এই ব্যবসা থেকে তার ১০০/১৫০ টাকা আয় হয় বলে জানান। জীবনে অনেক কষ্টভোগ করেছেন। ভুল পথে চলেছেন। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি বলেন, “ভালো পথে কাজ করে খেতে কি আনন্দ! বারে কি করে বুলবো। আল্লাহর কাছে অনেক কাঁদছি আল্লাহ আমাক বাকি জীবনটা যেন এভাবেই কাটাতে শক্তি দেয়।”
আসকান আলী দেখিয়েছেন ইচ্ছা থাকলে যেকোন কুঅভ্যাস মানুষ ত্যাগ করতে পারে। নিজের ইচ্ছা ও অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে আসকান আলী আজ মাদকাসক্ত থেকে যেমন নিজেকে মুক্ত করলেন ঠিক তেমনি অন্যকেও বার্তা দিলেন যে, উদ্যম ও মনোবল থাকলে মানুষ যেকোন বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে পারে।