বিলুপ্তপ্রায় তিসি চাষে রেহেনা বেগমের সফলতা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
তিসি চাষে সবচেয়ে সুবিধা হলো এটি বালি মাটিতে ভালো হয়। যে মাটিতে বালি বেশি অন্য কোন ফসল হয় না, সে জমিতে তিসি হয়। তিসি চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয় না, অল্প পরিমাণে গোবর সার দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া তিষি চাষে জমিতে আগাছা কম হয় ও পোকার আক্রমণ করে না। ফলে বিষ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে তিসির জমিতে সেচের প্রয়োজন পড়ে না ও তিসি গরু-ছাগলে খায়ও না। তিসির তেল পুষ্টিকর খাবার ও অনেকে মালিশ করে ব্যথার ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করেন। বিলুপ্তপ্রায় তিসি চাষে সফলতা অর্জন করে উপরোক্ত কথাটি বলেছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রেহেনা বেগম।
তিসি চাষে সফল রেহেনা বেগম (৪০) থাকেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পশ্চিম সাকুচিয়া গ্রামে। গ্রামে দীর্ঘদিন কৃষি কাজের সাথে যুক্ত থাকায় কোন মাটিতে কি ধরনের ফসল ভালো হবে তা বুঝতে পারেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “আমার এ জমিতে বালির পরিমাণ বেশি থাকায় অন্য কোন ফসল হয় না। অন্য ফসল চাষ করে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তখন আমার চিন্তায় আসে তিসি থাকলে এ জমিতে চাষ করা যেত ও উৎপাদন ভালো হতো। কিন্তু তিসি বীজ সংগ্রহ করার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, পাড়া প্রতিবেশির কাছে খোঁজ নিয়ে কোথাও পাইনি।” তিনি বলেন, “একদিন আমার শরিষা জমিতে (৪ বছর আগে) একটি তিসি গাছ দেখতে পাই। এই তিসি গাছের বীজ সংরক্ষণ করে আমি চাষ করি। আস্তে আস্তে আমার তিশি বীজ বাড়তে থাকে। এবছর ৭ শতাংশ জমিতে আমি তিসি চাষ করি। আমার যে জমিতে কোন ফসল হতো না সে জমিতে কোন খরচ ছাড়াই চাষ করি। আশা করছি ৭ শতাংশ জমিতে প্রায় এক মণ তিশি হবে।”
কিভাবে তিনি তিসি চাষ করনে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি আমার বাপ-দাদার তিসি চাষ দেখেছি। তা থেকেই অভিজ্ঞতা অর্জন করি কীভাবে আমি নিজে চাষ করতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “আজ থেকে ৩০ বছর আগে তিশি চাষ করা হতো ফলনও ভালো হতো। জমিতে দু’টি চাষ দিয়ে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে বপন করতে হয়।”
সাধারণত মাটিতে তিসি বীজ পড়লে অঙ্কুর দিয়ে বড় হতে থাকে। মাঘ মাসে ফুল আসে। ফুল দেখতে উপরের অংশে নীল ও নিচের অংশে সাদা হওয়ায় তিসি ক্ষেত দেখতে মনোমুগ্ধকরণ। তিসি গাছ ৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের পাতা সরু হয়। তিসি গাছে মাঘি শরিষার মত ডালপালা থাকে। এই ফসলের বীজ হয় তিলের মত কিন্তু দ্বিগুণ বড় হয়। তিসির তৈল ঘন বেশি ও আঠা জাতীয় হয়। একারণে তিসি ও শরিষা এক সাথে মিশিয়ে তেল তৈরি করা হয়। ৪০ কেজি তিসিতে ১৬ কেজি তেল হয়। যে জমিতে বালির পরিমাণ বেশি এবং অন্য কোন ফসল হয় না সে জমিতে যে কেউ তিসি চাষ করতে পারেন। এ ফসল চাষে কোন ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না বিধায় উৎপাদন খরচ একদম কম। তিশি চাষ আর্থিকভাবেও লাভজনক। এছাড়া পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা এবং জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তিসি চাষ করা উচিত বলে রেহেনা বেগম জানান।