শ্যামনগরের মৎস্য জাদুঘর
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে গাজী আল ইমরান
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা শ্যামনগর। আর এ উপজেলার একেবারেই কোলঘেঁষে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। আর সুন্দরবনের অপরূপ সুন্দর আলোয় আলোকিত হয়ে এ বনের পাদদেশে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধায়নে গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম। মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ পর্যটন কেন্দ্রটি মন কেড়েছে অসংখ্য পর্যটকের। ছুটির দিনে উপজেলার পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম হয় আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে। দর্শনার্থীদের জন্য শুধুমাত্র সুন্দরবন দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মো. আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়াম।
বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট পরিবেশ দূষণের কারণে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে মংস্য সম্পদ। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নিদর্শন দেখতে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলে বাস করা বিভিন্ন জলজ প্রাণীর সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই ব্যতিক্রম ধর্মী মৎস্য জাদুঘর গড়ে তুলেছে উপজেলা প্রশাসন।
জাদুঘরটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের সুন্দরবন অঞ্চল অর্থাৎ উপকূলীয় অঞ্চলের মাছের সাথে পরিচয় ঘটাতে তৈরি করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মো. মনজুর আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসেনের তত্বাবধায়নে এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, “জাদুঘরটিতে রয়েছে জলের রাজ্যে বিচরণ করা চুনোপুটি থেকে শুরু করে ১০২ প্রকার আধা লবণ এবং সামুদ্রিক মাছ, যেগুলো মেডিসিনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আঞ্চলিক নামের সাথে সাথে মাছের বৈজ্ঞানিক নামসহ সকল প্রকারের বর্ণনা দেওয়া আছে। যাতে করে দর্শনার্থীরা ওই মাছ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে।”
আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে ভেতরে নির্মিত আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়ামের ভিতরে প্রবেশ করে যে কেউ দেখতে পাবে কই, তাপসী, ছরি মাছ, রিফশার্ক, অক্টোপাস,শাপলা পাটা, হাড় কাকড়া, বাগদা, লটিয়া, চান্দা, বেলে, খলসে, ভেটকি, পারশে, খরসুলা, খলিসার মতো বাজারে কম চোখে পড়া অসংখ্য প্রজাতির মাছ। জানতে পারবে এই সকল মাছের আবাসস্থল ও ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যসমূহ। চোখে পড়বে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত বাঁশ ও বেতের তৈরি খেয়া নৌকা, মাছ ধরার বিভিন্ন রকমের জাল, পলো, বাঁশের তৈরি মাছ রাখার বিভিন্ন ধরনের উপকরণ। পরিবেশ দেখে মনে হবে যেন কোনো জেলের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন কেউ! সাথে সাথে সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে ছোট্ট পরিসরে তৈরি করেছে সুন্দরবন, যার মাধ্যমে মানুষ সুন্দরবন সর্ম্পকে জানতে ও বুঝতে পারবে।
মৎস্য জাদুঘর নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন সাগর বলেন, “আরও বড় পরিসরে এটিকে সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেওয়া হবে। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা উপকূলীয় অঞ্চলের সকল প্রজাতির মাছ দর্শনার্থীদের দেখাতে পারব।”