নানান কাজে ব্যবহৃত হাতিশুড় গাছ

নানান কাজে ব্যবহৃত হাতিশুড় গাছ

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

প্রকৃতিতে জন্মানো অনেক ধরনের উদ্ভিদ আছে। যার মধ্যে অনেক ধরনের উদ্ভিদ আছে যা প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। এ সকল উদ্ভিদ যেমন ভিন্ন ভিন্ন গুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এর ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে। এ সকল উদ্ভিদ কোনটা খাবার হিসাবে ব্যবহার হয় আবার কোনটি ঔষধি হিসাবে। শুধু মানুষ নয় গবাদি পশু-পাখির চিকিৎসা কাজেও ব্যবহৃত হয় এ সব উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ভান্ডার ও চিকিৎসা পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করেছে প্রাকৃতিক এই সম্পদ।
বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মালেও এগুলো একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। অঞ্চল ও এলাকাভেদে এর পরিচিতিও ভিন্ন। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া তেমনি একটি অচাষকৃত উদ্ভিদ হাতিশুড়। এটি শুকনা অথবা ভেজা প্রায় সব স্থানে জন্মে। আমাদের গ্রাম বাংলায় এর দেখা মেলে যত্রতত্র। যদিও এখন এর পরিমাণ কমে এসেছে কিন্তু এখনো এটি বিরল বলা চলে না। এ গাছ জন্মানোর কোন মৌসুম নেই প্রায় সব মৌসুমে এ গাছ জন্মে।

pic 1
এ গাছ লম্বায় প্রায় ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত হয়। এই গাছটি ঝাঁঝালো গন্ধ ঠিক মেনথলের মত। গাছটির কান্ডগুলো ফাঁকা এবং নরম। গাছটির পুষ্পদন্ডগুলো এমন ভাবে হয় যা দেখেই এর নাম কেন হাতিশুড় তা বুঝা যায়। লম্বা হয়ে হাতির শুরের মত একদম উপরের দিকে পেঁচিয়ে থাকে। এ গাছের ঔষধি গুণের দিক থেকে রয়েছে চমৎকার ক্ষমতা। এ গাছে যে সমস্ত গুণে গুনান্বিত তা হলো: বিভন্ন ধরনের ফোলায় যেমন-হঠাৎ ঠান্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে, আঘাতের ফোলা হলে, বা বাগী ফোলা অর্থাৎ উরু ও তলপেটের মাঝখানে, কুচকির ডান ও বাম দিকে যেকোন দিকে হতে পারে এক্ষেত্রে এ গাছের পাতা বেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগালে ফোলা ও ব্যথা এবং বাগী কমে যায়। বাতের ব্যথা হলে এ গাছের পাতার রস বেটে ছেঁকে তেল তৈরি করে গাঁটে লাগালে উপশম হবে।
বিষাক্ত কোন পোকার কামড়ের ফলে সে স্থানে জ্বালাপোড়া এবং ফোলা হলে এ গাছের পাতার রস করে লাগালে উপকৃত হয়। সর্দি জ্বর-সর্দিতে বুক ভার হলে এ গাছের পাতার রস গরম করে খেলে সর্দি বমি হয়ে বেরিয়ে যাবে। এছাড়াও একজিমা হলে সে স্থানে এই পাতার রস লাগালে কমে যায়। এমনকি ব্রণ এর দাগ দুর করতেও এ গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেতো করে লাগালো ব্রন যেমন সারবে আর হবেনা এবং ব্রণের দাগও দূর হবে।

pic-2jpg
কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক কৃষির প্রভাব, গাছটির গুনাগুন সম্পর্কে না জানা এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে পতিত জমে কমে যাওয়া উপকূলীয় এলাকা থেকে এ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক হলেও এসব উদ্ভিদের রয়েছে নানা ব্যবহার ও গুনাগুণ। হাতিশুড় গাছসহ অন্যান্য আরও অনেক উদ্ভিদও বহু গুণে সমৃদ্ধ। মানুষের ছোট বড় নানা প্রয়োজন মিটিয়ে স্থায়িত্বশীল জীবন গঠনে ভূমিকা রাখে এ সমস্ত অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। মানুষ জেনে না জেনে নানাভাবে এ প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বর্তমানে সময়ে যেসব উদ্ভিদ বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে সেগুলো এখনই সংরক্ষণ করা জরুরি। তাহলে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা হবে এবং প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ চিকিৎসা পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করে স্থায়িত্বশীল জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবে।

happy wheels 2

Comments