আব্দুল মোতালেবের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
ভূমিকা
পরিবেশবান্ধব ও স্থায়িত্বশীল জৈবকৃষি চর্চা করে সফল হয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার, নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. আব্দুল মোতালেব। নিজের কিছু পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে বিষমুক্ত শাকসবজি চাষ করে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হয়েছেন। তেমনি অন্যকেও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন জৈবকৃষি চর্চা সম্পর্কে। নিজে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক তৈরি করে নিজ সব্জি বাগানে ও ধান ক্ষেতে ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত সার বিক্রি করে নগদ টাকাও আয় করছেন। আলোচনায় উঠে আসে তার জৈব কৃষি চর্চা, নার্সারি তৈরি, দিনমজুর জীবনের কষ্ট, নেতৃত্বের জায়গা তৈরি করা, সামাজিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থায় জৈব কৃষির প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টিও। অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা অর্জন ও আত্মবিশ্বাসের কারণে তিনি আজ তার জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তার এমন ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আপনাদের সামনে।
নার্সারি তৈরি
২০১২ সালে ডিসেম্বর মাসে মধুপুরে নার্সারি কাজের উপর একটা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আব্দুল মোতালেব। ৫দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণে তিনি জানতে পারেন নার্সারি কিভাবে করতে হয়, নার্সারি করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়। তারপর ২০১৩ সালের প্রথম দিকে পেঁপে, বারোমাসি মরিচ ও বারোমাসি সাদা বেগুন চারা দিয়ে নার্সারি শুরু করেন এবং ভালোই লাভবান হন। এভাবে পর্যায়ক্রমে তিনি বিভন্ন ফলের ও পরিবেশ উপযোগী গাছের চারা উৎপাদন করেন। বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি হাফবিল্ডিং ঘর করেছেন। একটি সোলার ক্রয় করেছিলেন। তবে বর্তমানে তার বাড়িতে বিদুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কোমরে সমস্যা হওয়ার কারণে নার্সারির কাজ করতে পারছেন না। নার্সারি করা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে বারোমাসি মৌসুম ভিত্তিক শাকসব্জি চাষ করে বিক্রি করেন এবং কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি করে বিক্রি করেন। পাশাপাশি কেঁচো কম্পোস্ট ও বালাইনাশক তৈরি বিষয়ে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
দিনমজুর জীবন
ছোটবেলা থেকেই অন্যের বাড়িতে বাৎসরিক চুক্তিতে কাজ করতেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করাটা তাঁর জন্য খুব কষ্টকর ছিল। নিজের মতো করে কিছু করতে পারতেন না। সব সময় অন্যের হুকুম মেনে চলতে হতো। অন্যের বাড়িতে কাজ করেই তার সংসার চলতো। এক সময় চিন্তা করলেন এভাবে অন্যের বাড়িতে আর কতদিন কাজ করবো। বাড়িতে যেটুকু জায়গা আছে সেখানে তা সারাবছর পতিত থাকতো কোন কিছু করা হতো না। তাই উদ্যোগ নিলেন সেখানে সব্জি চাষ করার জন্য। সব্জি চাষ করে দেখলেন মোটামুটি ভালোই লাভবান হওয়া যায়। তিনি সব্জি চাষের উপর খুব জোর দিয়ে কাজ করতে লাগলেন। এক সময় দেখা গেল অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে পরিমাণ আয় হতো এখন সব্জি চাষ করে এর চেয়ে আরো বেশি আয় করা সম্ভব। অন্যদিকে স্বাধীনভাবে যেকোন কাজ করতে পারছেন। তারপর থেকে ছেড়ে দিলেন অন্যের বাড়িতে বাৎসরিক চুক্তিতে কাজ করাটি। এখন তিনি নিজের জমিতে নিজেই কাজ করে ভালো আয় করছেন। দিনমজুরি পেশা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছেন। এখন তিনি কাজ করেন নিজ জমিতে অন্যের জমিতে নয়। নিজের সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করতে পারায় আজ তিনি সফল একজন কৃষক। শুধু কৃষক নয় জৈব কৃষি চর্চাকারী একজন আদর্শ কৃষক।
জৈব কৃষি চর্চা
বারসিক ২০১২ সালে একটা প্রদর্শনী প্লট করা হয় আব্দুল মোতালেবের জমিতে। সেখানে শুধুমাত্র জৈবসার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়। সেই প্লটের রক্ষণাবেক্ষণ করেন তিনি নিজেই। প্লটে সার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল কুইক কম্পোস্ট যা গোবর, খৈল ও কুড়া দিয়ে বানানো। আর বালাইনাশক বানানো হয়েছিল বিভিন্ন পাতা ও মেহগণির বীজ দিয়ে। কুইক কম্পোস্ট ও জৈববালাই নাশক তৈরির দায়িত্ব পরে আব্দুল মোতলেব এর উপর। এরপর থেকেই তার জৈব পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করার চিন্তা মাথায় ঢুকে। জৈব পদ্ধতিতে প্রদর্শনী প্লটের ফলন ভালো হওয়া দেখে তিনি এ পদ্ধতিতে চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে কেচো কম্পোস্ট ও বালাইনাশক তৈরি করাটা ভালো করে শিখে নেন ও ব্যবহার শুরু করেন। ব্যবহার করে ভালোই সুফল পান তিনি। ব্যবহারের পর অতিরিক্ত যেটুকু ছিল তা একদিন বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। বাজারে কেঁচো কম্পোস্ট বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতার যখন বলতেন এই সার জির (কেঁচো) দিয়ে তৈরি সার তখন অনেকে গুরুত্ব দিত না। বলতো কেঁচো দিয়ে কি সার বানানো যায় নাকি পাগলে পাইসে? তাই প্রথম অবস্থায় কেউ কিনতে চায় নাই। বিক্রি করতে না পেরে পরীক্ষা করার জন্য কয়েকজনকে বিনামূল্যে বিতরণ করে দেন। এরপর আর তিনি বাজারে কেঁচো কম্পোস্ট বিক্রি করতে যাননি। যে জিনিস বিক্রি করা যায় না সেটি কেন বাজারে নেব। তিনি শুধু একটা আশায় বসে থাকেন যে একদিন হয়তোবা লোকজন এর কদর বুঝতে পারবে। এর প্রায় ১ মাস পর যাদেরকে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন একদিন তার বাড়িতে এসে আরও সার আছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। কেঁচো কম্পোস্ট বিক্রি করতে না পারায় কিছু কেঁচো কম্পোস্ট বস্তাবন্দী করে রেখেছিলেন সেখান থেকে তিনি প্রথমবারের মত ১৫ টাকা দরে ১০ কেজি বিক্রি করেন। যে ব্যক্তি ১০ কেজি কেঁচো কম্পোস্ট নিয়ে গিয়েছেন তিনিই আঃ মোতালেব এর কেঁচো কম্পোস্ট এর প্রচারণা করতে শুরু করেন। এরপর একে একে অনেকে তার কাছ থেকে কেঁচো কম্পোস্ট কিনতে আসেন। অনেকে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতিগুলো দেখতে আসেন। কেঁচো কম্পোস্টের কার্যকারিতা দেখে কয়েকজন কৃষক এই কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগ্রহী কৃষকদের তিনি কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির জন্য রিং বা চাড়ি স্থাপন করে দেন। এভাবে দিন দিন কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবহার বাড়তে থাকে। কেঁচো কম্পোস্ট প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর কেঁচো বিক্রি করছেন ১৫ দরে। এভাবে তিনি প্রতিমাসে কেঁচো ও কম্পোস্ট বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। কোন কোন মাসে এর চেয়েও বেশি আয় হয়।
অন্যদিকে শাকসব্জি বা ধান ক্ষেতে এখন দেখা মেলে যত্রতত্র পোকার আক্রমণ। এসব পোকা দমনে জন্য অনেকেই ছুটেন বাজারের কীটনাশক দোকানে বিষ ক্রয়ের জন্য। অথচ আব্দুল মোতালেব এখন নিজেই বিষ তৈরি করে নিজের সব্জি ও ধান ক্ষেতে প্রয়োগ করছেন। তাই জৈব বালাইনাশক তৈরি করেও তিনি বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন ধরণের গাছ গাছালি দিয়ে তৈরি করেন জৈব বালাইনাশক। জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানান তিনি। এছাড়াও যেহেতু এসব উপকরণ আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা যায় তাই এ বালাইনাশক তৈরি করতে কোন খরচ হয় না বলে জানান। আব্দুল মোতালেবের মতে একদিকে জৈব বালাইনাশক তৈরির উপকরণ সহজে সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে পার্শপ্রক্রিয়া নেই। আবার এটি তৈরি করতে কোন খরচ হয় না। সব মিলে তিনি জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করতে সবাইকে উৎসাহিত করেন। অনেকেই এখন তার দেখাদেখিতে এ কাজটি করছেন। আর যারা এ কাজ করছেন তারাও এখন তার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। আগ্রহী কৃষকেরা বাড়িতে এসে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন। যারাই আসেন তাদেরকে তিনি জৈব পদ্ধতিতে সব্জিচাষ করলে কি কি উপকার হয় তা জানিয়ে দেন। যেমন, প্রথমত জৈব পদ্ধতিতে সব্জিচাষ করলে বিষমুক্ত সব্জি খাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত মাটির গুণাগুণ ঠিক থাকে। তৃতীয়ত কম খরচে সব্জি ফলানো যায়। চতুর্থত পরিবেশের উপর কোন বিরূপ প্রভাব ফেলে না। আর একটি কথা বলতে তিনি কখনো ভূলে যান না। তা হল আজ আপনারা আমার কাছ থেকে যা কিছু শিখে যাচ্ছেন তা অন্যের মাঝেও প্রচার করবেন।
জৈব কৃষি প্রশিক্ষক
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে জৈবসার ও জৈব বালাই নাশক তৈরি ও ব্যবহার করে এখন তিনি রীতিমত এককজন দক্ষ কৃষক। জৈব কৃষি চর্চাটিকে আরো সম্প্রসারিত করতে তিনি বিভিন্ন গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেঁচো কম্পোস্ট ও জৈব বালাইনাশক তৈরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি এখন বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি তিনি এরমধ্যে আগ্রহী প্রায় ৬০ জনকে নিজ হাতে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যারা কৃষি কাজ করে তাদেরকে জৈব কৃষি চর্চা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরেন। অনেক কৃষক আছে যারা তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এখন জৈব কৃষি প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। জৈব কৃষির প্রতি তার ভালোবাসা ও ব্যবহারিক দক্ষতা তাকে আজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখন তিনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি ও জৈব বালাইনাশক তৈরী বিষয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয় যেমন কৈলাতি ইউনিয়নের জনতা উচ্চবিদ্যালয়, পোগলা ইউনিয়নের উদয়পুর উচ্চবিদ্যালয়, নলছাপ্রা উচ্চবিদ্যালয়, সেক্রেট হার্ট উচ্চবিদ্যালয়, লেঙ্গুরা উচ্চ বিদ্যালয়, সন্যাসীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও জৈবকৃষি চর্চা সম্পর্কে ক্লাস নিয়েছেন। ডিএসকে (দুঃস্থ স্বাস্থ কেন্দ্র), পারি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট, ওর্য়াল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও কারিতাস বাংলাদেশ সংস্থার জৈব সার ও বালাইনাশক বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন। জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক তৈরির বিষয়ে তিনি নিজ উপজেলার বাইরে অন্য উপজেলায় অর্থাৎ সুসং দূর্গাপুরে গিয়েও প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে যেটুকু তার ভালো লাগে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে তার মাধ্যমে একজন কৃষক জৈব পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন এটা ভেবে।
সামাজিক মর্যাদা ও নেতৃত্ব তৈরি
যে মানুষটি এক সময় অন্যের বাড়ীতে কাজ করতেন অন্যের হুকুম পালন করে চলতেন। সে মানুষটি আজ সমাজের মধ্যে একটা স্থান করে নিয়েছে। আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। তাই সামাজিকভাবে তাকে কোন মূল্যায়ন করা হতো না। অনেকেই তাকে কোন তেমন দাম দিতেন না। এমনকি কোন অনুষ্ঠানেও দাওয়াত পেতেন না। এখন নিজে একটা কিছু করে আর্থিকভাবে কিছুটা উন্নয়ন করছেন। বিভিন্ন সভা সেমিনার ও প্রশিক্ষণ করে দু’চারটা ভালো মন্দ কথা বলতে পারছেন। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিখছেন, জানছেন, যার ফলে মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। অনেকে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছেন। তাই সামাজিকভাবে কিছুটা হলেও মূল্যায়িত হচ্ছেন। এখন সমাজে তারও একটা স্থান হয়েছে। সামাজিক অনেক কাজের সাথেও তিনি দিন দিন জড়িয়ে পড়ছেন। বাল্যবিবাহ দমনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখছেন এ পর্যন্ত তিনি মোট ৭টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছেন।
সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা
সরকারি বিভিন্ন অফিসের তার এখন ভালো পরিচিতি। যার কারণে তিনি এখন সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করে থাকেন। নলছাপ্রা গ্রামে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা কমিটির এখন তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষি অফিসের থেকে শাকসব্জির বীজ, ধান বীজ, কৃষি উপকরণ, প্রদর্শনী প্লট করার জন্য প্রতি মৌসুমে যোগাযোগ করে সেবা প্রাপ্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর শাকসব্জির, সরিষা, গম, ভূট্টা, রসুন, পেঁয়াজ এর বীজ প্রাপ্তির জন্য ৩৫ জনকে সুযোগ করে দেন। বোরো মৌসুমে ধান বীজ প্রাপ্তির জন্য ১৭ জন সুযোগ করে দেন। আমন সৌসুমে ধান বীজ প্রাপ্তির জন্য ১৬ জন সুযোগ করে দেন। আব্দুল মোতালেব এর কাজের অগ্রগতি দেখে কৃষি অফিস থেকে একটি ধান মাড়াই মেশিন অর্ধেক ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হয়। তার উপর ভিত্তি করে কৃষি অফিসের উদ্যোগে একটি ৩০ সদস্যের একটি সংগঠন গঠন করা হয়। সে সংগঠনে আব্দুল মোতালেব সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংগঠনের নামে কৃষি অফিস থেকে একটি ভূট্টা ভাঙ্গার মেশিন, ২টি পানি তোলার সেলো মেশিন, ২টি স্প্রে মেশিন পেয়েছেন। যা তাদের কৃষি কাজে অনেক সতায়ক হয়েছে। ৬টি অর্ধেক মূল্যে টিউবওয়েল প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করেছেন, ৭ জনকে ৭টি গরু প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করেছেন। ১৩ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগাযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি অনেককে ডাক্তার দেখানোর জন্য উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এমনকি বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যান ডাক্তার দেখানো জন্য। এমন করে তিনি মাসে প্রায় কয়েকবার রোগী নিয়ে গিয়ে এলাবাসীর উপকার করে থাকেন। অন্যের সুখে দুখে পাশে থাকার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশপাশের ৪/৫টি গ্রামে যাদি কেউ মারা যান তখন সেটির শোক সংবাদ মাইকিং করা দেন তিনি বিনা পয়সায়। এর জন্য তিনি কোন ধরণের টাকা পয়সা নেন না।
বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আছেন যারা এখন তার খোঁজে নিয়ে তার বাড়ি যান। কেচো কম্পোস্ট তৈরি দেখতে ও ক্রয় করতে। একজন সফল চাষী আব্দুল মোতালেব সব সময় ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন বিভিন্ন কাজ নিয়ে। এই ব্যস্ততার যেন কোন শেষ নেই, কোন ক্ষয় নেই। সব সময় কাজে ডুবে থেকে সফলতার উচ্চ শিখরে নিজেকে আবিষ্কার করতে চান।