রেনুকা ও বিলকিস আমাদের নারীদের অনুপ্রেরণা
রাজশাহী থেকে মো: শহিদুল ইসলাম
কোন ভালো কাজ দেখা দেখি আরেকজন করে, এভাবেই ভালো কাজ, ভালো উন্নয়নগুলো ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এভাবেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এটাই চাহিদাভিত্তিক উন্নয়ন পরিক্রমা। মানুষ যখন বোঝে এটা তাঁর নিজের জন্য নিজের উন্নয়ন, তখন নিজ থেকেই কাজগুলো এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। আর সেই সকল উন্নয়নে কখনো অধিক অর্থের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কথা বলে, দশের লাঠি, একের বোঝা। তাই বলা যায়, জনগণের উন্নয়নের জন্য জনগণকে ভাবতে এবং তাদের চিন্তা চেতনাগুলোকে মূল্যায়ন করলে তাঁরা তাঁদের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে পারে খুব সহজেই। আর সেই এগিয়ে নেয়াতে যে সহযোগিতাটুকু দরকার তা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর এগিয়ে আসলেই অর্জিত হবে আমাদের জনগোষ্ঠীর কাঙ্খিত উন্নয়ন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/04/337384503_216428217655471_8010439852877187893_n-1024x576.jpg)
তেমনি একটি উন্নয়ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের কারিগর পড়ার বিলকিস বেগম (৫০) এবং রেনুকা বেগম (৪১) । বিলকিস বেগম আগ্রহের জায়গা থেকে নিজে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা শিখেছিলেন সেই আট বছর আগে। নিজে বাড়িতে এই সার তৈরি করে নিজের জমিতে ব্যবহার করতেন। এই ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করার ফলে জমির সবজি এবং অন্যান্য ফসল ভালো হওয়ার কারণে আশেপাশের কৃষকরা তাঁর কাছ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট চাহিদা বা কিনতে থাকেন। এভাবে তাঁর ভার্মিকম্পোস্ট সার বিক্রির পরিমাণ বাড়তে থাকে। একইভাবে তাঁর উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়তে থাকে।
গত বছর শেষের দিকে তাঁর কাছে জানা যায়, ভার্মিকম্পোস্ট বিক্রি করে তিনি মাসে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। চলতি বছর (২০২৩) সালের এপ্রিল মাসে তাঁর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এখন তাঁর মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা। একটি শেড থেকে এখন তার ৪টি শেড তৈরি হয়েছে। যেখানে ৩৫০ এর বেশি ভার্মিকম্পোস্ট চারি নিয়মিত সার উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিলকিস বেগম শুধু নিজের আয় নয়, তিনি অন্যকেও সার তৈরি এবং বিপণনে সহায়তা করেন। তাঁর দেখাদেখি এই গ্রামের প্রায় ১৫ জন নারী ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি ও বিপণনের সাথে জড়িত। একই সাথে এই গ্রামের প্রায় সকল কৃষক তাদের জমিতে পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন।
বিলকিস বেগমের কারণে গ্রামটিতে দিনে দিনে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে রেনুকা বেগম নিজের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির পাশাপাশি দেশিয় সকল সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে সংসারের আয় রোজগার বাড়াতে সহায়তা করছেন। তিনি দেশি হলুদ এবং মরিচের গুড়া বিক্রি করে মাসে প্রায় ৫ হাজার টাকার বেশি আয় করেন। একই সাথে তাঁর বাড়িটিতে নানা জাতের দেশিয় ফলজ এবং বনজ গাছের সমাহার আছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/04/337615496_591408539392078_7504742583277622819_n-1024x576.jpg)
রেনুকা এবং বিলকিসের এই উন্নয়নমূলক কাজের কারণে এই গ্রামের নারীরা একত্রিত হয়েছেন। তাঁরা নিজেরা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। নারীদের উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে তাঁরা বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাঁদের সংগঠনের ম্যাধমে সরকারি বেসরকারি সেবা পরিসেবাগুলো সহজেই পেতে সহায়তা করছে। রেনুকা এবং বিলকিসের আন্তরিকতায় এবং পরিশ্রমের কারণে একটি গ্রামের নারীরা সংগঠনের মাধ্যমে নানা উপকার পাচ্ছেন এবং একই সাথে উৎপাদনসহ নিজেদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
গ্রামটির সাবানা বেগম (৪৫) বলেন, ‘বিলকিসের কারণে আমাদের গ্রামর মানুষ পরিবেশবান্ধব কৃষির দিকগুলো সম্পর্কে জেনেছেন। আর এ কাজে আমাদেরকে বারসিক সহাযতা করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘রেনুকা আমাদেরকে সাংগঠনিক দিকগুলোতে সহায়তা করেছেন। তাই আমরা বলতে পারি বিলকিস এবং রেনুকা আমাদের অনুপ্রেরণা।’