করোনা দুর্যোগ কালে যুবদের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
করোনা নামে গোটা বিশ্ব যেন আজ আতঙ্কে। এ এমন এক মহামারি যার ছোবলে গোটা বিশ্ব যেন জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিনতিপাত করছে। প্রতিমাসে, প্রতিদিনে যেনো এক মৃত্যুর হোলি খেলা চলছে। আর এ হোলি খেলা কবে যে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামি দামি ডাক্তার ও বিজ্ঞানী আছে যারা নিমিষের মধ্যে কতো কিছু তৈরি করতে পারে। গোটা বিশ্ব ভাংচুর করে নতুন কিছু হরহামেশেই তৈরি করার সেই দক্ষতা জ্ঞান সবই তাদের আছে। তারাও আজ যেনো হিমশিম খাচ্ছে। আর তা কোন অর্থ কড়ি, কোন সম্পদ, কোন বস্তু কিংবা ব্যক্তিকে হারইয়ে দেবার জন্য নয়; তা হলো করোনা নামের এক অদৃশ্য ভাইরাস এর সাথে পাল্লা দিতে। যার কারণে বিশ্বে প্রতিটি মানুষকে প্রতিটি ক্ষণে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ যে কি হবে? কেমন হবে আমাদের আগামীর দিনগুলো? আসলেই কি এমনই থাকবে? না পৃথিবীর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবেকি? পৃথিবীতে কি এমন কোন পরিস্থিতি আসতে চলছে যাতে থাকবে না মানুষ, বাঁচবেনা প্রাণ, খাদ্যের জন্য দেখা দিবে সহা সংকট। দিনে দিনে এই করোনার সাথে বাড়বে হাহাকার; এমনই এক নির্মম ইতিহাস দেখতে চলেছে গোটা বিশ্ব।
আর এ মহামারী আজ হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এটা প্রথমত এশিয়া মহাদেশের দেশ চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হযে আজ বিশ্বের আকাশে বাতাসে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে। আর এ ছোটার কোন শেষ কারো চোখে পড়ছে না। দিনকে দিন যেন আরো কঠিন ও ভয়ংকার রুপ নিচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটা দেশ তার নিজস্ব কায়দা, চিন্তা ভাবনা, কৌশল কাজে লাগিয়ে এ ভয়ংকারী করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। আর এ চেষ্টার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শারীরিক সংস্পর্শ বজায় না রাখতে গিয়ে এক এক দেশ, এক এক এলাকা, এক এক গ্রাম লক ডাউন ঘোষনা, সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, বিদেশ এবং অন্য এলাকা থেকে আসাদেরকে কোয়ারেন্টাইন এর ব্যবস্থা, সে সব বাড়ি সিল মারা, রাস্তা ঘাটে গণপরিবহন বন্ধ, সংঘবদ্ধ হয়ে হাট বাজারে যাওয়া এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকা, নিজেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন, মাক্স ও হ্যান্ডগ্লোভস ব্যবহার করা, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোওযা, বাজারের দোকান গুলোতে দুরুত্ব বজায় রাখার নানান ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশ বাংলাদেশও কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এখানেও সরকার নানা ভাবে নানান মুখী পদক্ষেপ গ্রহন করে চলেছে। কখনো সহজ ভাবে বলে বোঝানো আবার কখনো প্রশাসনের কঠিন হাতে উদ্যোগ চলমান রেখে চলেছে।
করেনা প্রতিরোধে সরকারের এ নানান ধরনের উদ্যোগকে সরকারের পাশে থেকে সবচেয়ে বেশি এবং গুরুত্ব সহকারে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে বা সহযোগিতা করছে তারা আমাদের যুব সমাজ। তারা আর কেউ নয়- তারা হলো আমাদের ভাই-বোন-বন্ধু-পরিজনেরা। যারা নির্ভয় ও নির্ভিক গতিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারা কোন মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী নয়। তারা নিজের বাপের খেয়ে পরে আমাদের সমাজের মানুষের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবদান রেখে চলেছে। কোন এলাকাতে কোন দুর্যোগ হলে আগে চলে যায় এ যুবরা নিজেদের প্রাণের মায়কে তোকাক্কা না করে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। ঠিক একইভাবে করোনার এই দুর্যোগকালে সরকারী ও বেসরাকারী প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী, আমাদের সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা অনেকেই এই সময় নিজের পরিজনদের সুরক্ষা নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিজেদের গা ঢাকা দিয়েছে। আবার অনেকেই স্ব শরীরে না থেকে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।
সবাই যখন নিজের কথা ভেবে গা ঢাকা দিয়েছে! সেখানে কিন্তু করোনার এই মহামারীতে আমাদের যুবসমাজ ঘরে বসে নেই। তাদের অর্থ কড়ি না থাকলেও এ্ই দুর্দিনে তাদের বড় যে সম্পদ তা হলো মনোবল সেটাকে নিযে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িযেছে। এ্ ক্লান্তিকাল দুর্যোগে অন্য মানুষেরা সেইভাবে মাঠে না থাকলে আমাদের যুবরা ঠিকই মাঠে আছে। করোনায় এদুর্যোগের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, যুবরা কিন্তু নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে করোনার এই মাঠে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। তারা যানে যে এটা থুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তার পরেও মানবিক দিকে এবং সমাজের ও দেশের কথা ভেবে তারা এই করোনা ঝুঁকি নিচ্ছে। আমাদের সরাকারী নির্দেশনা এবং বিভিন্ন পর্য়ায়ে যুবদেরকে নানান ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হলেও সব কিছু তোযাক্কা না করে কিন্তু তারা কাজ করছে। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন যুবদের সাথে কথা হলে জানা যায় যে, যেখানে সবকিছু লকডাউন; কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না, সেখানে যুবরা মাঠে নেমে কথনো হ্যান্ডবিল বিতরণ, বিভিন্ন পোস্টার টানানো ও বিতরণ, মৌখিক সর্তকতা, বিদেশ এবং দেশের অন্য এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিদের হোম কোরেন্টাইন নিশ্চিৎকরন এবং হাতে সিল মারা, কে কখন কোথা থেকে আসছে তার তদারকি করা, তালিকা তৈরি করা, সেটা নিয়ে আবার প্রশাসন কে জানানো, জীবানুনাশক স্প্রে করা, চাঁদা উঠিয়ে এবং নিজেদের অর্থায়নে খাদ্য বিতরণ করা, সাবান ও মাক্স বিতরণ, দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি করে খাদ্য নিশ্চিৎকরনে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ, দোকানগুলোতে দুরুত্ব বজায় রাখার জন্য নিশানা করা, বিভিন্ন গ্রামে লকডাউন করা, ইট ভাটার শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে আলাদা সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে যাওযা, ভিক্ষুকদের খাদ্য দেওযা, বিভিন্ন মোড় ও মসজিদে সাবান দিয়ে হাত ধোওযার ব্যবস্থা করা, অসুস্থ্য রোগীকে রক্ত প্রদান, বাজার ও বাসস্ট্যান্ডগুলো ভিড় হচ্ছে কিনা তা দেখা, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সাথে করনীয় বিষয়ে আলোচনা করা সহ নানান ধরনের কাজ চলমান রেখেছে যুবরা।
করেনা এই দুর্যোগের মধ্যে কেন এ্ ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করছে এবং এ কাজের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে ঝুঁকি পূর্ণ ছিলো আর এ কাজের ঝুঁকি কমানোর জন্য কি করা দরকার তা জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক সিডিও ইয়থ টিমের সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন যে, “মানসিক দিক থেকে মানুষের সেবা করতে ভালো লাগে। এছাড়াও মানবিক দিক এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের এ দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে আমরা এ কাজ গুলো করছি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমি মনে করি সমাজের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আর করোনার এ কাজে সবচেযে ঝুঁকি ছিলাম সেই সময় যখন বিদেশ থেকে কেউ আসলে তার বাড়িতে যেযে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা এবং তার হাতে সিল মারা। আমরা সেই সময় টা পার করেছি এখন আর বিদেশ থেকে তেমন কেউ আসছে না। আমরা প্রায় ১৫৫০ জনের হাতে সিল মেরেছি। আর আমরা ২০ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে সিডিও ইয়ুথ টিমের ৩০০ সদস্য সম্মিলিত ভাবে এ কাজ করে যাচ্ছি”।
এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকছুদুর রহমান বলেন যে, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি আমাদের দেশেও যেভাবে মানুষ মরছে। এতে করে আমরা সবাইতো ঝুঁকির মধ্যে আছি। কোন সময় কি হবে তা তো আর বলা যায় না। আমার দেশ আমার এলাকায় যাতে এই মহামারী বিস্তার না ঘটে তার জন্য আমরা যুবরা এ ঝুঁকির কাজে যুক্ত হয়েছি। একজন যুব হিসেবে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু নৈতিক দায়িত্ব তো আছে সেটাতো পালন করতে হবে। বর্তমান সময়ে বিদেশের মানুষ এখন না আসলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইট ভাটার শ্রমিকরা আসছে। এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমার দেশ আমার এলাকা যদি ভালো থাকে তাহলে আমি ভালো থাকবো। তাই সবার কথা মাথায় রেখে এই কাজ করছি। আমরা সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের ৯২ জন সদস্য সার্বক্ষণীক এ কাজে যুক্ত আছি”।
যুবরা উপরোক্ত যে কাজ গুলো করছে তার প্রতি পদে পদে ঝুকিঁ। এসময় তাদের ঘরে থাকার কথা। সেটা না করে তারা প্রতিদিন মানুষকে সচেতন করা ও এলাকা যাতে ভালো থাকে তার জন্য বাইরে বের হচ্ছে। তাদের এই কাজ করতে যেযে নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে নানা ধরনের সহায়তা পেয়েছে। এছাড়াও অনেক শুভকাংখী ব্যক্তি নানা সময়ে তাদের উৎসায়িত করে যাচ্ছে। হয়তোবা কোন সময় এ কাজ করতে যেযে সৃষ্টিকর্তা না করুক তাদের কোন সমস্যা না হয়। তার পরেও তো ভালো যে মানুষের জন্য কিছু করতে পারছে এটা অনেক। তাদের এ কাজগুলো আরো ভালো ভাবে করার জন্য অনেক ধরনের উপকরণ দরকার। যেমন উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটিইজার, গ্লোভস, মাক্স, স্প্রে মেশিন, হ্যান্ড মাইক ও পিপিই দরকার। এুগুলো পেলে হযতোবা কাজগুলো আরো ভালো ভাবে করতে পারবে তারা। যদিও তারা যেহেতু সব কিছু খুবই সর্তকতা ও সাবধানের সাথে করার চেষ্টা করছে।
আমরা জানি যে, একটি দেশের উল্লেখ যোগ্য অংশ হচ্ছে যুব সমাজ। আর এই যুব সমাজই আমাদের দেশ গঠনে ও উন্নযনে ব্যপক ভূমিকা পালন করে। দেশের যুবরা যত বেশি দায়িত্ববান হয সে দেশ ততো বেশি উন্নত হয। সেক্ষেত্রে কোন অংশে আমাদের দেশের যুবরাও পিছিয়ে নেই। বর্তমান সময়ে করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন নিস্তব্ধ ও নিঃশেষ হতে চলেছে। নানা দেশে নানা ভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছে। বিশ্বে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা হযতোবা কাটিযে উঠতে কত সময লাগবে তা বলার কোন অবকাশ নেই। এতে করে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। প্রতি পদে পদে যেন বিপদ এসে হাজির হচ্ছে আর তা যেনো তেনো বিপদ নয়। সে হলো মৃত্যুর হুমখি যেকোন মুহুর্তে কার প্রাণ, কিভাবে যাবে, কার সংস্পর্শে যাবে তা কেউ বলতে পারছেনা।
ঠিক সেই খানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের যুবরা নানান ধরনের কাজ করছে এই করোনা মাহামারী কালে। যে সময়ে দেশের সকলকেই ঘরে ও নিরাপদে থাকার জন্য নানান মুখী প্রচারণা ও উদ্যোগ গ্রহণ করছে সারা দেশে। আর সেই মুহুর্তে আমাদের যুবরা রাস্তায় দেশ ও জাতির কথা নিজেরে বিবেকের কথা ভেবে মাঠে নেমেছে এবং কাজ করে চলেছে। তারা যে ঝুকি নিয়ে সমাজ সেবা করছে, মানুষের ভালো করছে, এতে করে তাদের বড় কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয কিনা তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।এ যেনো অন্যেরে ভালো চাইতে নিজের বিপদ ডেকে আনা। আমাদের কারো জানা নেই কি তার পরিনতি হতে পারে।