নারী-পুরুষের কাজ বলে আলাদা কিছু নেই
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
মানিকগঞ্জ্ জেলার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম চরমত্ত। এ গ্রামে বাস করেন সুমি আক্তার, বয়স: ২০ বছর। তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। স্বামী, এক ছেলে, শ^শুর-শাশুরী ও এক দেবর নিয়ে তার যৌথ সংসার। পেশায় তিনি একজন গৃহিনী।
সুমি আক্তারের বাবার বাড়ি রাজবাড়ি জেলায়। স্বামীর নাম মো: মামুন। তাঁর স্বামী পেশায় একজন রংমিস্ত্রি ছিলেন। কিন্তু রং এর কাজ করতে গিয়ে তার ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। পরে তিনি রং এর কাজ ছেড়ে দিয়ে ইঞ্জিনচালিত রিক্সা চালানো শুরু করেন। তাঁর শ^শুর শ্রমিকের কাজ করেন। তার দেবর লেখাপড়া করছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/12/Case-Sumi-1024x768.jpg)
বারসিক নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চরমত্ত গ্রামের কিশোরীদের উদ্যোগে গড়ে উঠে প্রত্যয় কিশোরী সংগঠন। কিশোরী সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখে ভালো লাগে সুমি আক্তারের। তিনি উদ্যোগ নেন নারীদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করার। সুমি আক্তারে প্রচেষ্টায় এবং বারসিক’র সহযোগিতায় আলোর পথিক নারী সংগঠন নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠে। সুমি আক্তার সেই সংগঠনের সভাপতি।
এই প্রসঙ্গে সুমি আক্তার বলেন, “করোনাকালীন সময়ে আমার স্বামী অটোরিক্সাটি বিক্রি দেন। রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন যেতে থাকে। চোখে অন্ধকার দেখতে থাকি। কি করবো, কীভাবে সংসার চলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বারসিক থেকে একবার এক প্রশিক্ষণে যাই। সেখানে বুঝতে পারি কোনো কাজই ছোট না। ছেলে-মেয়েদের কাজ বলে আলাদা কিছু নাই। সব কাজই কাজ। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পাই কিছু একটা করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘তখন ভাবলাম যেটাতে পুঁজি কম লাগে সেই ধরণের কিছু একটা করি। সিদ্ধান্ত নিলাম এলাকায় চায়ের দোকান করবো। কিন্তু কিভাবে করবো, আমার তো কোনো পুঁজিই নাই। তখন গ্রামের একটা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিই। সেই টাকা দিয়ে একটা গরুর বাছুর কিনি এবং ছোট্ট একটা দোকান ঘর তুলে শুধু চা, কিছু বিস্কুট ও বেকারীর জিনিস কিনে শুরু করলাম। প্রথম দিকে একটু বেচাকেনা কম হইতো কিন্তু এখন ভালোই হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে সংসার সংসার চালাই। আমার স্বামী গরু পালন করেন। মাঝে মাঝে দোকানেও বসে। আমার এক ছেলে।”
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2023/12/Case-Sumi1-1024x768.jpg)
সুমি আক্তার আরও বলেন, “আমাদের বাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে। প্রথম যখন চায়ের দোকান করি তখন এলাকার লোকজন, মুরুব্বীরা নানা ধরণের কটু কথা বলেছেন। বউ হয়ে চায়ের দোকান করবে এটা কেউ মেনে নিতে চাইছিল না। কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়ি নাই। বারসিক থেকে সাহস পেয়েছি। অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আজ আমি সফল হয়েছি। একদিন যেসব মুরুব্বীরা আমার কাজকে বাঁকা চোখে দেখতো আজ তারাই আমার দোকানে এসে চা খায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গল্প করেন। এটা দেখে আমারও ভাল লাগে।”
“কাজ” কাজই হয়। নারীর কাজ বা পুরুষের কাজ বলে কোনো কাজ নেই! সুমি আক্তার এটা প্রমাণ করেছেন। নারীরা সুযোগ পেলে তার্ওা সংসারের হাল ধরতে পারেন। আমাদের সবার উচিত সেই সুযোগটা তৈরি করে দেওয়া। নারীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করে তোলা। যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। আর সমসুযোগ ও সমমর্যাদা পাওয়া প্রতিটি নারীর অধিকার।