স্বামীর পাশাপাশি পরিবারে খরচ যুগিয়ে শান্তিতে আছি

শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম (৩৫)। শ্যামনগর উপজেলায় যে কয়টি ইউনিয়ন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিকার তার মধ্যে মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়ন কোন অংশে কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দূর্যোগে দরিদ্র মানুষগুলো আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন না। অন্যদিকে পারিবারিক চাহিদা মিটাতে দ্রব্যমূল্যের যে উর্দ্ধগতি তাতে করে হতদরিদ্র মানুষগুলো আছেন বিপদে। পরিবারে একজনের পক্ষে সংসার চালাতে যেন ‘নুন আনতে পানতা ফুরাই’ এর তো অবস্থা। ঠিক তেমনিভাবেই চলছিলো আম্বিয়া বেগমের সংসার।

আম্বিয়া বেগমের স্বামী জবেদ আলী গাজী (৫০) একজন দিনমুজুর। নিজেদের বসতভিটাটুকু ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নাই। আম্বিয়া বেগমের একজন মেয়ে আছমা খাতুন (১৩) একজন ছেলে (শাহিন ৫) রয়েছে। মেয়ে আছমা খাতুন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। স্বামী জবেদ আলী গাজীর নিয়মিত দিনমুজুরের কাজ না থাকায় একার পক্ষে সংসার চালতে হিমশিম হয়ে যেত। অন্যদিকে আম্বিয়া বেগমের জোন মজুরি দেওয়ার অভ্যাস ছিলো না।উল্লেখ্য আম্বিয়া বেগমের বাপের বাড়ি ছিলো ছোট ভেটখালী। বিয়ে হওয়ার আগে কিছুটা সেলাই মেশিনের কাজ শিখছিলেন। পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়িতে এসে অন্যর সেলাই মেশিন থেকে ভালোভাবে কাজটি শিখেছিলেন। শেখার পরে দীর্ঘদিন পুঁজির অভাবে নিজে সেলাই মেশিনটি কিনতে পারেননি আম্বিয়া বেগম।

২০২১ সালে বারসিকের বাাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়নে। পরবর্তীতে এলাকা সোশ্যাল ম্যাপিং করার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় (ধনী, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, হতদরিদ্র)। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ আম্বিয়া বেগমের পরিবারকে হতদরিদ্রের তালিকায় চিহ্নিত করলে এক পর্যায়ে আম্বিয়া বেগম কুলতলী ধুন্দল সিএসও দলের সদস্য হয়। আম্বিয়া বেগম ধুন্দল সিএসও দলের সদস্য হওয়ার পরে সর্বপ্রথম জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত সাপ্তাহিক গ্রুপে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিয়মিত গ্রুপে আলোচনা পরবর্তী তিনি সেলাই মেশিন ক্রয় ও হাঁস, মুরগি পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আম্বিয়া বেগমকে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের উপকরণ হিসাবে একটি সেলাই মেশিন, হাঁস, মুরগি, বীজ ও গাছের চারাসহ মোট ১৩ হাজার ৫শ’ টাকা সহযোগিতা করা হয় প্রকল্প থেকে।

সহযোগিতা পেয়ে আম্বিয়া বেগমের খুব উপকার হয়েছে। তিনি সেলাই মেশিনের কাজ ও হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রয় করে নিজের পরিবারে কিছু খরচসহ দলের সঞ্চয়, কন্ট্রিবিউশন পরিশোধের পরও ১১,৮০০ টাকা জমা করেন। সেই টাকা আবার উত্তোলন করে দুইটি ছাগল ক্রয় করে আরো আয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এই প্রসঙ্গে আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘বারসিক ও নেটজ বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। পরিবারে আয় বাড়ানোর জন্য আমার যে পুঁজির প্রয়োজন ছিলো সেটা দেওয়ার জন্য। এখন আমি আমার পরিবারে ও স্বামীকে সহায়তা করতে পারছি। সংসারটাও আগের চেয়ে ভালো চলছে।’

আম্বিয়া বেগমের স্বপ্ন নিজের সন্তান-দুটিকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন যাতে সমাজে তাদের সম্মান বাড়ে। এভাবেই নিজেদের উৎপাদনশীল সম্পদ বাড়িয়ে তা থেকে আয় করে পরিবারটা ভালো থাকবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া তাঁর ইচ্ছে স্বামীর পাশাপাশি পারিবারে খরচ যুগিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার।

happy wheels 2

Comments