নিভৃত চরে নিরব কৃষি বিপ্লব
:: দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল
প্রায় দেড়শত বছর আগে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরের উর্বরা মাটিতে ঘটেছে নিরব কৃষি বিপ্লব। বিষখালী নদী তীরের জনবসতি নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করলেও নদীর চর বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবিকার ধরন। পতিত চরে আবাদ করে সমৃদ্ধির ফসল তুলছেন এখন নদী তীরবর্তী ভূমিহীন জেলেরা। প্রায় ১২০০ একর বিস্তৃত চরে কোন বৃক্ষরাজি না থাকলে সেখানে সারাবছর ফসলে ভরা থাকে। বছরে দুই মৌসুমে ধান আর শীতকালীন সবজি, সূর্যমূখী ও গমের আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ফসল উৎপন্ন হয় এই চরে।
উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদীর মধ্যবর্তী চর রুহিতার কৃষকরা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই নিরন্তর লড়াই চালিয়ে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন চরের মাটি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ চরে ঘটেছে নিরব কৃষি বিপ্লব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১২০০ একরের বিস্তীর্ণ চরে ফলবান ধান আর মৌসুমী সবজিতে ভরপুর। ধানের পাশাপাশি লাউ, করলা, কুমড়া, শশা ও সীমসহ নানা জাতের শীতকালীন শাক সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। রুহিতার চরে উৎপাদিত মৌসুমী সবজি স্থানীয় বাজারের নিত্যকার চাহিদা মিটিয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও সরবরাহ হয়ে থাকে। বামনার ভূমিহীন জেলে ও প্রান্তিক কৃষকরা মিলে বিচ্ছিন্ন চরে কয়েক যুগ ধরে আবাদ করে আসলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে কোন তথ্য প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা আজও পায়নি।
রুহিতা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. কালাম মল্লিক জানান, প্রায় দেড়শত বছর আগে বামনা রুহিতা ও বেতাগীর কালিকা বাড়ি গ্রামের মধ্যবর্তী এ চর জেগে ওঠে। চরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার চরের জমি পতিত পড়ে ছিল যুগ যুগ ধরে। এরশাদ সরকারের আমলে তিন একর করে চরের পতিত জমি বামনা উপজেলার নদী তীরবর্তী ভূমিহীন জেলে ও প্রান্তি কৃষরেকর মাঝে পত্তন দেওয়া হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বলে সেখানে কোন মানুষের বসতি গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন কৃষকরা প্রায় তিন কিলোমিটার নদী নৌকায় পাড়ি দিয়ে চরের মাটিতে আবাদ করে আসছেন।
কৃষকরা চরে ভাদ্র মাসে আউশ আর পৌষে স্থানীয় মোটা ধানের আবাদ করে থাকেন। এছাড়া শীত মৌসুমে লাউ, করলা, সীম, শশা, চিচিংগা, মরিচ, ভূট্রা, খেসারি ডাল, সূর্যমূখিসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করে আসছেন। এ ছাড়া রুহিতা চর কয়েক হাজার গরু ও মহিষের বিচরণ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রুহিতা গ্রামের ষাটোর্ধ কৃষক ইউসূফ কাজী জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পতিত চরে কৃষকরা প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করে আসছেন। তবে কৃষি বিভাগ কিংবা কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে চরের কৃষকরা কোন সহযোগিতা পায় না।
এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি.এম. রেজাউল করিম রুহিতার চরে কৃষি বিভাগের সহায়তা না দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “রুহিতা চরটি বিষখালী নদীর মধ্যবর্তী হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দুর্গম ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেখানে কৃষি বিভাগ সরাসরি এখনও যুক্ত হতে পারেনি। তবে বিস্তীর্ণ চরে কৃষকরা প্রচুর ফসল উৎপাদন করে চলেছেন। তাদের কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতার জন্য দ্রুত চর এলাকা পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।