নেত্রকোণায় বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি নেত্রকোনার রামেশ্বরপুরে অবস্থিত বারসিক’র সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ বিষয় দু’দিনব্যাপি এক কর্মশালা। উক্ত কর্মশালায় নেত্রকোণা অঞ্চলের বিভিন্ন কর্মএলাকার যুব সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বারসিক কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। দুইদিনব্যাপি এই কর্মশালাটিতে সহায়কের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আলী বিশ্বাস।
কর্মশালার প্রথমদিন অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় ও দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়। এরপর ‘বৈচিত্র্য’ বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেন সহায়ক। তিনি বলেন, ‘বৈচিত্র্য হচ্ছে ভিন্নতা বা অনেক কিছুর সমাহার। একত্রে অবস্থান। বৈচিত্র্য না থাকলে পরিবেশের বিলুপ্তি ঘটে। বৈচিত্র্যের মাধমে প্রাণের উদ্ভব হয়।’ বৈচিত্র্যের বিভিন্ন ধরণ নিয়েও তিনি আলোচনা করেন।
কর্মশালায় এক পর্যায়ে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণ ৫টি দলে ভাগ হয়ে হাওড়, নদী, সমতলভূমি, বন/জঙ্গল ও পাহাড় এই ৫টি কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের চিত্র অংকন করেন। অংশগ্রহণকারীগণ চিত্র অংকণের মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিবেশ অঞ্চল মানুষের জীবন-জীবিকায় কিভাবে অবদান রাখে, তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং প্রতিটি উপাদান একে অপরের সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত সেটি উপস্থাপন করেন। প্রত্যেক দলের উপস্থাপন শেষে সঞ্চালক পরিবেশ/প্রতিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণির আন্তঃনির্ভরশীলতার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে সহায়ক সৈয়দ আলী বিশ্বাস তাঁর আলোচনায় মানুষের মৌলিক চাহিদার সাথে উদ্ভিদ ও প্রাণির অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার উদ্ভব হয়েছে। উদ্ভিদ এবং প্রাণিকে মানুষ কিভাবে তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাজে লাগাবে, সেটি নিজস্ব চিন্তাধারার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে কেউ কৃষক, কেউ জেলে আবার কেউ কুমার হয়েছে। এসকল উপাদান ব্যবহার করার জন্য মানুষ তাঁর বুদ্ধি বা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন। বুদ্ধির প্রয়োগ আছে বলেই উদ্ভিদ ও প্রাণি টিকে আছে। পেশার সাথে জ্ঞানের সম্পর্ক। পেশার প্রয়োগ না থাকলে বৈচিত্র্য থাকবেনা। আবার বৈচিত্র্য না থাকলে সমাজে বৈষম্য তৈরী হবে। উদ্ভিদ ও প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। খাদ্য সংকট তৈরি হবে।’
তিনি জানান, প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান যেমন একে অপরের উপর নির্ভরশীল তেমনি সমাজের প্রত্যেক পেশাজীবীও একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। কোনো মানুষ যেমন একা বসবাস করতে পারেনা তেমনি জীবনধারণের জন্যও তাঁকে অনেকের উপর নির্ভর করতে হয়। বিভিন্ন পেশাজীবীর নিজস্ব স্বার্থ, চাহিদা, সম্মান, বিশ্বাস ইত্যাদি যখন সহাবস্থানে থাকবে তখনই বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে উঠবে। সহায়ক কর্মশালায় বহুত্ববাদী সমাজ ও এর গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন।
দুইদিনের কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীগণ ভবিষ্যতে এ ধরণের শিক্ষণীয় বিষয় আয়োজন করার জন্য বারসিক’র নিকট সুপারিশ করেন। তাঁরা আরো জানান, এই আলোচনায় তাঁরা অনেক নতুন কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মানুষ যে প্রকৃতির কত কিছুর সাথে সম্পৃক্ত এ বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন। সকল পেশাজীবীর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাঁদের সম্মান দেয়া, প্রকৃতিকে রক্ষা করা এসকল বিষয়ে অংশগ্রহণকারী যুবদের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে দুইদিন ব্যাপি কর্মশালার সমাপ্তি হয়।