বালু জমিতে ভূট্টা চাষ করে সফল পরিমল
নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের চন্দ্রডিঙ্গা একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম। গ্রামটিতে প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের কারণে আবাদী জমিগুলো অনাবাদী জমিতে রূপান্তর হচ্ছে। অনেক ফসলি জমি বালি পড়ে উচু হয়ে গেছে। ফলে সেচেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার কারণে ধানচাষ অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে বালিতে ঢাকা পড়া জমিগুলোতে।
বালিতে ঢাকা পড়া জমিগুলো চাষযোগ্য করার জন্য বারসিক’র সহযোগিতায় পরিমল রেমার নেতৃত্বে পরীক্ষামূলক রবিশস্য চাষের জন্য একটি গবেষণা প্লট করা হয়। গবেষণায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে ভূট্টা ও বাদাম চিহ্নিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরিমল রেমা গত বছর থেকে তার বাড়ির সামনে ৮ শতাংশ জমিতে ভূট্টা চাষ করেন। স্থানীয় বাজারে প্রতি ভূট্টা ১০ টাকা দরে বিক্রি করে গত বছর ১৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। এবছরও তিনি প্রায় ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এখনো জমিতে প্রায় অর্ধেক ভূট্টা আছে।
পরিমল রেমা তার গ্রামে প্রথম শুরু করেন ভূট্টা চাষ। তার দেখাদেখি এ বছর এ গ্রামের আরো ৪ জন কৃষক ভূট্টা চাষ করেছেন। বালি পড়ে যাওয়ার পর যে জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকতো সেসব জমির মধ্যে এবছর ৯৬ শতাংশ জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা ভূট্টা চাষ করেছেন। চাষকৃত ভূট্টা সবারই সমান তালে ভালো হয়েছে। ভুট্টা চাষে সফল কৃষক পরিমল রেমা বলেন, ‘আমি গত বছর থেকে আমার বাড়ির সামনের জমিতে পরীক্ষামূলক ভূট্টা চাষ শুরু করি। ভূট্টা চাষ করে ফলনও ভালো পাই। তাই এবারও ভ্ট্টূা চাষ করেছি। এবার আমার ভূট্টা চাষ দেখে আরো ৪ জন কৃষক তাদের জমিতে ভূট্টা করেছে।’ গ্রেগরী ¤্রং বলেন, ‘আমার জমি অনাবাদিই থাকতো। কোন কিছু করতাম না। এ বছর পরিমলের দেখাদেখি আমিও ভূট্টা চাষ করেছি মোটামুটি ভালোই হয়েছে।’ সাদেক মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই তার জমিতে এ বছর ভূট্টা করেছে দেখলাম ভালোই হয়েছে। আশা করি আগামী বছর আমিও আমার কিছু উচু জমি আছে সেখানে ভূট্টা চাষ করবো।’
বালি জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পরীক্ষামূলক রবিশস্য গবেষণা প্লট করা হয়েছিল গত বছর বারসিক’র উদ্যোগে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার স্থানীয় কৃষকেরা তাদের অনাবাদি জমিগুলোতে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করেছেন। ভূট্টা, বাদাম, মিষ্টি আলু, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, খিরা, গোল আলু ইত্যাদি। যেসব জমিগুলো ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে থাকতো। সেসব জমিগুলো এখন রবি মৌসুমে চাষের আওতায় চলে এসেছে। পর্যায়ক্রমে যেসব জমি এখনো অনাবাদি আছে তাও আগামী বছর আবাদ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।