ফিলিপাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালার শিখন সহভাগিতা
ফিলিপাইন থেকে ফিরে অর্পণা ঘ্রাগ্রা, পার্থ সারথি পাল ও এবিএম তৌহিদুল আলম
ফিলিপাইনের নাগাসিটিস্থ পেনাফ্রেন্সিয়া রিসোর্টে Locating agro-ecology as countervailing knowledge in advancing People-Led Development for Food Sovereignty শিরোনামে বিগত এপ্রিল ৪-১২, ২০১৮ তারিখে এক অংশগ্রহণমূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পেস্টিসাইড একশন নেটওয়ার্ক -এশিয়া প্যাসিফিক’র আয়োজনে সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল লার্নিং এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মের এই তৃতীয় কর্মশালাটিতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও ফিলিপিনের ২৯ জন উন্নয়নকর্মী অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক ধারণায়ন ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে অবস্থান করে দেখা-শেখা-জানা-অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরা হল:
ফিলিপাইনের গ্রামীণ জীবন
প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে গ্রামীণ ফিলিপিনোদের সহজ সরল জীবনযাপন। পাহাড়ি উঁচু জমিতে সারি সারি নারকেলের বাগানে ঘেরা তাদের ছোট্ট ছোট্ট কুটির। কর্মশালার ৩য় ও ৪র্থ দিনে অংশগ্রহণকারীগণ Bayanihan গ্রাম পরিদর্শন করেন ও সেই গ্রামের কয়েকজন কৃষকের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। এখানে অবস্থানকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলি বিভক্ত হয়ে কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য, গ্রামীণ যুবকদের উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা, কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থা, কৃষক দলের উন্নয়ন কার্যক্রম, জেন্ডার সমতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে জানার জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা হয়। রাত্রি যাপনকালে অংশগ্রহণকারীদের গ্রামবাসীর জীবনযাপন, খাদ্যাভাস, কৃষি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভেরও সুযোগ হয়।
ফিলিপিনোদের খাদ্য তালিকায় নারকেলের রয়েছে বহুমূখী ব্যবহার। এদেশে নারিকেল সারাবছরই জন্মে। তাই নারিকেল থেকে বছরব্যাপী তাদের আয় করার সুযোগও রয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, ফিলিপাইনে মাত্র দুটি ঋতু। মার্চ-মে মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, জুন-ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। ফিলিপাইন দেশটি খুবই দূর্যোগ প্রবণ। প্রতিবছরই এখানকার মানুষদের প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। কৃষক সংগঠনের সদস্য লানি গোওয়াভেজ বলেন, “গ্রামটি টাইফুন প্রবণ এলাকায় অবস্থিত।” টাইফুনের পূর্বে হেবাগাট নামক ঝড় আসে। আর তখনই তারা জেনে যায় এরপর টাইফুন শুরু হবে। আর সেই অনুসারে গ্রামবাসী টাইফুন মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রতিবছরই এখানে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টাইফুন আঘাত হানে। এই সময় ঘরবাড়ি, গাছপালা, পশুপাখি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই অনেককেই প্রতিবছরই নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি বা মেরামত করতে হয়। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখিগুলোকেও টাইফুন মোকাবেলা করতে হয়। কারণ এখানকার মানুষ গবাদি প্রাণিগুলো ঘরের মধ্যে রেখে প্রতিপালন করে না। এগুলো প্রতিপালনের জন্য পৃথক ঘরও তৈরি করে না। দিন-রাত বড় গাছের ছায়ার নীচে রেখেই প্রতিপালন করেন। গবাদি প্রাণির খাদ্যের জন্য বাড়তি পরিশ্রম ও খরচের প্রয়োজন পড়ে না। গ্রামে পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে যা চরে বেড়ানো গবাদি প্রাণি অনায়াসে খায়। মহিষকে ফিলিপিনোরা বলে ক্যারাবাও। আর এই ক্যারাবাওই হলো তাদের জাতীয় পশু। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে মহিষ পালন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ফিলিপিনোদের খাদ্য তৈরিতেও রয়েছে নিজস্ব রন্ধন পদ্ধতি। এরা Salty Egg নামে বিশেষ ধরনের সিদ্ধ ডিম খেয়ে অভ্যস্ত। হাঁস বা মুরগির ডিম বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ডিমের রং ও স্বাদের পরিবর্তন আনা হয়। এর স্বাদ লবণাক্ত, ডিমের সাদা ও কুসুম ঘন হলুদ রঙের হয়। আর খোলস হয় উজ্জ্বল বেগুণি বর্ণের। সাধারণত এই ডিমটি টমেটোর সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ফিলিপিনো গ্রামবাসীদের প্রাত্যহিক জীবনে হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত দেখা যায়।
খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ে গ্রামীণ যুবকদের ভাবনা
খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিয়ে ফিলিপিনো যুবকদের ভাবনা জানার জন্য যুব সংগঠনের সদস্য-সদস্যাদের সাথে আলোচনা করা হয়। তারা জানায়, সমাজে যারা এখনও ক্ষুধা, দারিদ্রতা, আশ্রয়হীন ও জমির মালিকানার জন্য সংগ্রাম করছে তাদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তারা সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনে ৫০০ জনের অধিক সদস্য-সদস্যা আছে। তরুণরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সদস্যদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইল, ফোন ও ম্যাসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করে থাকে। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা সামাজিক সচেতনতার কাজগুলো করে থাকেন।
এছাড়াও ভূমিহীন কৃষকদের জমির অধিকার, জমি দখল, জিএমও, ও গোল্ডেন রাইস প্রভৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এই যুব সংগঠন। কিছু কিছু যুবক এগ্রোইকোলজিভিত্তিক কৃষিচর্চা করছে এবং কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ কিশোর জেফ্রি গোওয়াভেজ নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে এবং ধান ব্রিডিং কৌশল সে ইতোমধ্যে শিখে নিয়েছে। সে চলতি মৌসুমে নিজের ব্রিডিং করা ধান মাঠে পরীক্ষণ করছে। জেফি জানায়, সে তার দেশকে ধান জাতবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করতে চায়। এছাড়াও সে তার বাবার অনুপ্রেরণায় জমির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বছরব্যাপী বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে থাকে। সংগঠনের সহসভাপতি রুয়েল রাবি, কামারিনার্সস পলিটেকনিক কলেজের ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছে। কৃষিক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত যুবদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সে বলে, “এখনকার বাবা-মায়েরা ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখায়। সেই কারণে কৃষক হওয়ার মানসিকতা নিয়ে অনেকেই গড়ে ওঠে না।” সংগঠনের সভাপতি এঞ্জেলিকো অরোগো বলেন, “কৃষি আমাদের জন্য এবং আমাদের পরিবার ও দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে কৃষির বিষয় আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত।” কৃষিতে যুবদের সম্পৃক্ততা খাদ্য সার্বভৌমত্বকে ত্বরান্বিত করবে বলে তারা মনে করে।
কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র্যের প্রায়োগিক চর্চা পরিদর্শন
অংশগ্রহণকারীদের একটি দল ফিলিপিনো কৃষকদের এগ্রোইকোলজি চর্চা সম্পর্কে জানার জন্য Veneracion গ্রামের কৃষক এডুইন ডি গোওয়াভেজ-এর কৃষি বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন সংগঠন MASIPAG এর সহযোগিতায় ধানের সংকরায়ণের মাধ্যমে নতুন ধানজাত উদ্ভাবন করছেন এবং সেগুলো গ্রামের কৃষকদের মাঝে বর্ধন ও সম্প্রসারণ করছেন। এই বছর তিনি ৩৩ ধরনের লাইন নিয়ে পরীক্ষণ করেছেন। গোওয়াভেজ জানায়, তার কৃষি জমি ২ হেক্টর। তার মধ্যে বসতভিটেতে শুধুমাত্র নিজেদের থাকার জন্য ছোট্ট একটি বাড়ি ছাড়া সমস্ত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শাক, সবজি ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করেন। এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে হরেক রকমের অচাষকৃত শাকসবজি ও ঔষধি লতা-গুল্ম। তার মধ্যে কোবরাবাই নামক এক ধরনের ঔষধি গাছ আছে যার বীজ সাপ ও কুকুরের কামড়ের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা হয় বলে তিনি জানান।
গোওয়াভেজ এখনও কারাবাও (মহিষ) ও আড়ারো (সমস্ত লোহা দিয়ে তৈরি করা বিশেষ ধরনের লাঙ্গল) দিয়ে জমি চাষ করেন। কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন না। জমিতে সেচ দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। ফসল উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তাঁর বাড়িতে জমির যথোপযুক্ত ব্যবহার বুঝা যায় একই জমিতে শিমুল আলু (কাসাবা) গাছের নীচে মিষ্টি আলু চাষের পদ্ধতি দেখে। এছাড়া ছোট আকারের হেলামন (মিষ্টি টমেটো) প্রাকৃতিকভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে তার জমিতে। তিনি জানান, এই বীজ ঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ গাছের পাকা টমেটোর বীজ জমিতে পড়ছে, মাটিতেই সংরক্ষিত হচ্ছে, আবার নির্দিষ্ট সময়ে বীজ অংকুরোদগম হচ্ছে। জমির এক পাশে প্রায় ৩-৪ শতাংশ জমিতে গবাদি প্রাণির জন্য ঘাস সংরক্ষণ করছেন। ঘাসের ফুল ও ফলগুলো অনেকটা ধনিয়ার মত। সেটিও প্রাকৃতিকভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে প্রতিবছর। তারা শুধুমাত্র পরিচর্যা করছেন মাত্র।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ গ্রামের কৃষক সংগঠনের পরিচালনায় ৩০ ধরনের ধানজাত গবেষণার প্লট পরিদর্শন করেন। কৃষক-ব্রিডার আলফ্রেডো জানান, এই ধানজাত গবেষণা প্লটে কোন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এমনকি সেচও দেওয়া হয় না। এলাকায় চড়ুই পাখির উপদ্রব ছাড়া ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের তেমন হয় আক্রমণ না।
MT. ISAROG এ প্রাকৃতিক পার্ক পরিদর্শন
নাগাসিটি নামক শহরের বারাঙ্গাই পানিকুয়েসন এলাকায় MT. ISAROG এ প্রাকৃতিক পাকর্টি অবস্থিত। এটি পাহাড়ের অনেক উপরে অনেকটা এলাকাজুড়ে বিস্তৃৃত ও সংরক্ষিত বন। প্রায় ২-৩ কি.মি. দূরে যে কোন ধরনের যানবাহন রেখে হেঁটে যেতে হয় এখানে। এই পার্কটি ছোট বড় নানান জাতের গাছ-পালায় পরিপূর্ণ। অনেকগুলো গাছের সামনে নেমপ্লেইট টানানো আছে। নেমপ্লেইট দেখলেই গাছের স্থানীয় ও বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে জানা যায়। ফিলিপাইনের জাতীয় গাছের নাম নারা। ছোট বড় আকারের নারা গাছটি সারা বাগানজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে। আর বাগানজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ফার্ণ। সব থেকে বড় আকৃতির ফার্ণ দেখতে বড় খেজুর গাছের মত। যার নাম ফিলিপিনো ভাষায় সালিপাংপাং। এটি দেখতে প্রায় বড় খেজুর গাছের মত। তবে পাতাগুলো উপরের দিকে গিয়ে একসাথে ছাতার মত ছড়ানো। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মাসিপাগের কর্মী ফ্রান্সিস জানালেন, এই ফার্ণ গাছগুলো দূষিত বাতাস শোষণ করে পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখে, আবহাওয়াকে ঠান্ডা রাখে এবং অর্কিড জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। আরেক প্রজাতির গাছের নাম পাকো। মাটির সাথে লেগে থাকা অবস্থায় এর লম্বা পাতাগুলো একত্রে উপরের দিকে ছাতার মত ছড়িয়ে থাকে। মাসিপাগের অপর কর্মী এলমার জানান, কিছু কিছু ফার্ণ গাছগুলোতে অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ছোট আকৃতির লাল রঙের ফুল ফোটে। এ গাছের শিকড় থেকে চারা গজায়। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে প্রায় ৬ জাতের ফার্ণ চোখে পড়েছে। এখানে আরো রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক মালাবসাই ঝর্ণা। স্থানীয় ভাষায় মালাবসাই অর্থ ফ্রেস ওয়াটার অর্থ্যাৎ স্বাদু পানির ঝর্ণা। এই বাগানের ছোট বড় গাছগুলোই এই ঝর্ণাকে অবিরাম ঝরতে সাহায্য করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশের কৃষকদের সমস্যা প্রায় একই। ফিলিপিনো কৃষকরা সংগঠিতভাবে আন্দোলন করছেন সেই সমস্যার সমাধানের জন্য। একইভাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি প্রতিবেশিক চর্চা ও সংস্কৃতিও প্রায় কাছাকাছি। ফিলিপাইনের কৃষকরা তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ও আন্তরিক। তাছাড়া তাদের মধ্যে অতিথিপরায়ণতা ও সৌজন্যতা বোধও লক্ষ্যণীয়।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নিজ নিজ দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া শস্য ফসলের বীজ স্থানীয় কৃষকদের সাথে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিময়ের মধ্য দিয়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।