সাম্প্রতিক পোস্ট

বাই সাইকেল আমার স্বাধীনতা
Exif_JPEG_420

বাই সাইকেল আমার স্বাধীনতা

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থকে মুকতার হোসেন ও সত্যরঞ্জন সাহা

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রীগণ “বাই সাইকেল আমার স্বাধীনতা” স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বারসিক হরিরামপুরের কর্মীগণ সাইকেল চালানো নিয়ে ছাত্রীদের সাথে আলোচনা করে উৎসাহ প্রদানের পর থেকে ছাত্রীদের মধ্যে এই প্রত্যয় জন্মলাভ করে। ছাত্রীদের অভিভাবকগণও এ বিষয়ে তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করেছেন।

বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার থেকে আগ্রহী ছাত্রীদের সাইকেল চালানোর জন্য “সাইকেল” দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে প্রথমে লিজা আক্তার ও পিংকি আক্তার নিজে নিজে বাড়িতে সাইকেল চালিয়ে শিখে। এরপর তারা সাইকেল চালিয়ে নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। এভাবে স্কুলে যাওয়ার মাধ্যমে “বাই সাইকেল আমার স্বাধীনতা” কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীগণ দেখে উৎসাহিত হয়। তাদের দেখাদেখিতে প্রাইমারী ও হাইস্কুলে স্কুলের ছাত্রীদের মাঝে দু’চারজন করে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে আসা শুরু করে।

Exif_JPEG_420

নারী শিক্ষার্থীদের সাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ের আসার কারণ নিয়ে আলোচনা করে জানা যায় যে, স্কুল থেকে অনেক শিক্ষার্থীর বাড়ি দুরে হওয়ার কারণে রিক্সা ভাড়া বা পায়ে হেটে বিদ্যালয়ে আসতে অনেক সমস্যা হয়। অনেক শিক্ষার্থী সময় মত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। অন্যদিকে ক্লাস শেষ করে আবার প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে যেতে সন্ধ্যা হয়। ফলে অনেক অভিভাবকদের চিন্তায় পড়তে হতো। নারী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াকে গতিশীল করা এবং তাদের পথচলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার, মানিকগঞ্জ ও এম রাজ্জাক উচ্চ বিদ্যালয়, পাটগ্রাম অনাথ বন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং আন্ধারমানিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী সাইকেল চালানোকে উৎসাহিত করার জন্য স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে সাইকেল র‌্যালির অনুষ্ঠিত আয়োজন করে।

২০১৪ সালে যখন ছাত্রীরা স্কুলে সাইকেল নিয়ে আসত তখন কিছু মানুষ তাদেরকে উৎসাহ দিত। আবার কেউ কেউ ছাত্রীদের সাইকেল চালানো দেখে তিরস্কার করত। মানুষের তিরস্কারকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে বাইসাইকেল চালানো শিখে এবং স্কুলে আসে ছাত্রীরা। এই প্রসঙ্গে পাটগ্রাম অনাথ বন্ধু সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মাসুমা আক্তার (১৩) বলেন, “যদি আমরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে বা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যাই তাহলে লোকজন আমাদের অবহেলার চোখে দেখত। কেউ কেউ বলত মেয়েরা আবার সাইকেল চালায়! কেউ আবার রাস্তার ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করত বাড়ি কোথায়, বাপের নাম কি! এতে আমরা সঙ্কোচবোধ করি।” তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন অনেক ছাত্রীই সাইকেলযোগে স্কুলে যায়।

ছাত্রীদের সাইকেল চালানো দেখাদেখি দিন দিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে হরিরামপুর উপজেলার ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ৫৫ জন ছাত্রী বাই সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসে। এ বিষয়ে পাটগ্রাম অনাথ বন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা নারীদের সাইকেল নিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করি এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনমুলক আলোচনা করি। আজ নারী দিবসের সাইকেল র‌্যালির মধ্যে অভিভাবক, সুশীল সমাজ সকল পেশার মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দিপনা বাড়বে।” পাটগ্রাম অনাথ বন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মাহবুবা আক্তার (১৪) বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের আরো অনেক মেয়েদের সাইকেল চালাতে পারে। কিন্তু একটি সাইকেল কিনতে ৭ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা লাগে। অনেক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের পক্ষে কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই যদি সরকারের পক্ষ বা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গরিব ও মেধাবীদের সাইকেল দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ছাত্রীরা আরো এগিয়ে যাবে।” আন্ধারমানিক গ্রামের শিক্ষার্থীর অভিবাবক সুনীল সরকার বলেন, “শুধু ছেলেকে নয় মেয়েকে লেখাপড়া করানোর মাধ্যমে একটি সুন্দর জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। সাইকেল চালানোর মাধ্যমে পড়ার কাজ সহজ হবে।”

happy wheels 2

Comments