বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণদের অঙ্গীকার
রাজশাহী থেকে জাওয়াদ আহমেদ রাফি ও দেবশ্রী মন্ডল
বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে তরুণ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, শিল্পী, নাগরিক সমাজসহ প্রবীণ অভিজ্ঞজন উদ্যোগী হয়ে বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র গঠন করেন। এই কেন্দ্রের সবচে’ সক্রিয় ও গতিশীল দায়িত্ব পালন করেন তরুণরা। দীর্ঘ দিন থেকে তারা সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষকে সম্পৃক্ত করে আলোচনা, মতবিনিময় এবং নানান মানুষের পরামর্শকে সম্বল করে এই বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রটিকে সচল ও সক্রিয় করে তুলেছেন। তরুণ অংশের ২১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে তারা নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যে এবং আরও নিত্যনতুন উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছেন। এই বরেন্দ্র শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রকে গড়ে তোলার পেছনে যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাজ করেছে সেগুলো হলো:-
১. শিক্ষার্থী ও তারুণ্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং নবীণ এবং প্রবীণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন
২. সামাজিক-প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়তা করা এবং নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করা
৩. ভিন্ন ভিন্ন প্রাণের পারস্পারিক নির্ভরতার সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষায় ভুমিকা রাখা;
৪. ভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির জ্ঞান, দক্ষতাকে ধারণ করে মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করার মনসিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করা
৫. প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি তৈরি এবং সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা।
৬. শিক্ষার্র্র্থী ও তারুণ্যের মধ্যে আত্ম¡বিশ্বাস তৈরি করা;
৭. পরিবেশ, প্রতিবেশ, সমাজ, জীবন ও বৈচিত্র্য ধারণা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা/সমালোচনা/পাঠচক্র আয়োজন করা।
৮. যুুব, স্বেচ্ছাসেবী ও প্রবীণদের সামাজিক নেতৃত্ব বৃদ্ধি এবং সামাজিক ও কল্যাণমুখি সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা- অভিগম্যতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা;
৯. মাটি, পানিসহ ভিন ভিন্নœ প্রাণের ওপর সহিংসতারোধে গণসচেতনতা তৈরি করা এবং আঞ্চলিক ও জাতীয় সংলাপ এবং যৌথ প্রচারমূলক কর্মসূচির আয়োজন করা;
১০. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়/অভিযোজনে স্থানীয় এলাকার নদী-খাল, খাড়ি, পুকুর, বরেন্দ্র অঞ্চল ও কৃষিজমি সুরক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করা।
১১. স্থানীয় কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১২. প্রতিবেশ উপযোগী বনায়ন ও বনায়ন সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা
১৩. অসুস্থ কৃষক-আদিবাসীসহ প্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার প্রয়োজনে বিনামূল্যে রক্ত দান ও বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করা।
১৪. যৌতুক, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং সামাজিক জনসচেতনতামূলক উন্নয়নধর্মী কাজ করা।
১৫. সেচ্ছাশ্রম এর ভিত্তিতে নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যুক্ত হওয়া।
১৬. দেশের শিক্ষা ও পাঠ্যক্রমে কৃষকদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-আন্দোলনের বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে যুক্ত করা।
১৭. দেশের বৈচিত্র্যময় কৃষি এবং বীজে কৃষক ও নারীর স্বনির্ভর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৮. বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি জমি রক্ষায় শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলা। কৃষক-কৃষক অভিজ্ঞতা ও কৃষি সহযোগিতা বাড়ানো।
১৯. সংগঠন নিজ এলাকার প্রাণসম্পদে (মাটি, কৃষি উপকরণ, পানি, মাছ, বন) অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এলাকার সমমনা সংগঠনগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
২০. সংগঠনের সদস্যরা নিজ সংগঠন ছাড়াও আশেপাশের প্রাণসম্পদের অধিকার বঞ্চিত জনগণকে সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা ।
বরেন্দ্র শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের সদস্যগণ ইতিমধ্যে উল্লেখিত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নানান উদ্যোগ নিয়েছেন। পাখিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে রক্ষার জন্য তারা প্রচারণা শুরু করেছেন। সমাজের বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, যৌতুকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করেছেন এবং শিক্ষা প্রসারসহ অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এলাকার গণ্যমান্য, দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ তাদের এই পথচলাকে আরও গতিশীল করে তুলেছে। তরুণরা এই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে নিজেদের আরও শাণিত করতে চান, আরও দায়িত্বশীল করতে চান এবং আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান সমাজ, সংস্কৃতিসহ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনে।