শিক্ষক হরিপদ সূত্রধর পদ্মাপাড়ের সক্রেটিস: অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
বারসিক ও মানিকগঞ্জের সামাজিক সংগঠন উত্তরণের যৌথ আয়োজনে ‘গুণীজন আড্ডা’ নামে এক অনলাইনে আলোচনা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনলাইন আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মানিকগঞ্জ খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের অধ্যাপক, সাংবাদিক ও সমাজ সংগঠক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু। আড্ডায় আলোচনা করেন আইনজীবী,ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব,পরিবেশবাদি ও সমাজ সংগঠক এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীরমুক্তিযোদ্ধা শংকর প্রসাদ ভৌমিক, নারী আন্দোলনের অগ্রসর সৈনিক, জাতীয় মহিলা সংস্থার মানিকগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান লক্ষী চ্যাট্যার্জি, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, হরিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাসার সবুজ, শিক্ষার্থী সুশান্ত হালদার, সাবেক ছাত্রনেতা রুমি আক্তার, লেমুবাড়ি বিনোদাসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিনবন্ধু রায়, কবি বিনয় কর্মকার, উন্নয়নকর্মী আব্দুল ওয়াহেদ ও উত্তরণে সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিক প্রভাষক আমিনূর রহমান অঞ্জন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও উত্তরণের সভাপতি বিমল চন্দ্র রায়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/07/11-1024x576.png)
আড্ডায় সভাপতি বক্তব্যে সাইফুদ্দিন নান্নু বলেন, ‘অসম্ভব বিনয়ী, সৎজন, গুণী, নাট্যজন হরিপদ সূত্রধর। তার ছাত্ররা তার জীবিত অবস্থায় তাঁর স্মারকগ্রন্থ ‘হরিপদ সূত্রধল স্মারকগ্রস্থ’ প্রকাশ করেছেন। হরিরামপুরের বিভিন্ন সমাবেশে খুবই সাধারণভাবে অংশগ্রহণ করেন তবে যা বিশ্বাস করেন তা তিনি সবসময় ধারণ করেন। হরিরামপুর সবুজায়নে, পাবলিক লাইব্রেরীর নবযাত্রায়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্মকান্ডে তাঁর সরব উপস্থিতি অনেককে অনুপ্রাণিত করে। তিনি প্রকৃত পদ্মাপাড়ের সক্রেটিস। এলাকার মানুষ, তরুণ, শিশু, কিশোর, সবার কি অসীম শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। ডাকসাইটে আমলা, বিচারক, প্রভাবশালী রাজনীতিক, অধ্যাপকসহ খেঁেট খাওয়া মানুষেরাও কি অবলীলায় তাঁর কাছে শ্রদ্ধায় নত হন।’
এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘হরিপদ স্যার আমার সরাসরি স্যার নয় তারপরও উনি আমার স্যার কারণ উনার কাছ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। উনি বিনয়ী এবং শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা দিয়েছেন তা অনেক সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখছে।’ অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, ‘একজন আর্দশ শিক্ষকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো হবে তার আর্দশ ধারণ করার মধ্য দিয়ে। তা না হলে প্রকৃত শ্রদ্ধা বা সন্মান জানানো যাবে না।’ বীরমুক্তিযোদ্ধা শংকর প্রসাদ ভৌমিক বলেন, ‘হরিপদবাবু এক প্রকৃত দেশপ্রেমিক। দেশে একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে এবং সমাজের নানান অসংগতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন।’ লক্ষী চ্যাটার্জি বলেন, ‘আমিও একজন শিক্ষক, একটি বিদ্যালয়ের প্রধান তবে হরিপদ সূত্রধরের কাছে কিছুই না। তিনি চিন্তা চেতনায় এবং ধর্মীয় নানান বিষয়ে পান্ডিন্ত্য রাখেন।’ আবুল বাসার সবুজ বলেন, ‘হরিপদ স্যার আমাদের আর্দশ। স্যার নানান বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দেন এবং হরিরামপুরে উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট। হরিরামপুরের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে শিল্পকলা একাডেমী চালুর চেষ্টা চলছে।’ আমিনূর রহমান অঞ্জন বলেন, ‘আমার বিভিন্ন সময় মানিকগঞ্জের গুণীজনদের সাথে মতবিনিময় বা সন্মানীত করা চেষ্টা করি। তবে এই অনলাইন চেষ্টার মাধ্যমে হরিপদ স্যারকে সন্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা সন্মানীত হলাম।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2021/07/210663723_1393812230988606_1350989873807838239_n.png)
উল্লেখ্য, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যজন, নাট্যকার, সমাজ সংগঠক ও শিক্ষক হরিপদ সূত্রধর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার অনাথবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষক। ৮০ বছরের বেশি বয়সী তরুণ হরিপদ স্যার হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় একজন সংগঠক। হরিরামপুর উপজেলা পদ্মানদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছে বছর বছর। কিন্তু ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগের অভাব। তার প্রতিবাদে এলাকার মানুষের সাথে যুক্ত হয়েছেন। নাটক রচনা করে লিখেছেন ভাঙনের ফলে মানুষের সর্বশান্ত হবার বিষয়ে। নিজের পরিবার একাধিক ভাঙনের শিকার হয়েছে। হরিরামপুর পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘদিন বন্ধ অযতœ অবহেলায় তাকে সচলতার ছাত্রদের সাথে যুক্ত করে সচল করতে সচেষ্ট হন। নিজের জীবনের নানান বাধা, বৈষম্যকে প্রত্যক্ষ করে ১৯৬১ সাল ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চ শিক্ষালাভ করে শিক্ষক হিসাবে একাধিক স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। এই বৈষম্য ও নানান বাধাসমূহ দূরীকরণে সবসময় তাকে এই সকল কাজ করতে তাগিদ দেয়। অসাম্প্রদায়িক শোষণ মুক্ত একটি সমাজের স্বপ্ন সব সময় লালন করেন।