ফারজানার সংগ্রামী জীবন
নাছিমা আক্তার, আশাশুনি (শীউলা), সাতক্ষীরা
১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় ফারজানা অক্তারের বয়স ছিলো এক মাস ১৫ দিন। ঝড়ের সময় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ঝড় ও পানির ¯্রােতের সাথে মায়ের সাথে ভেসে যায় ফারজানা আক্তার। গ্রামবাসীসহ আত্মীয়স্বজনরা অনেক খোঁজার পরে ফারজানার মাকে মৃত অবস্থায় পায়। তখন সবাই ধরে নেয় ফারজানাও হয়তো মারা গেছে কিন্তু বিধাতার দয়ায় বেঁচে যায় ফারজানা। মাত্র দেড় মাস বয়সে মাকে হারিয়ে ফারজানার ঠাঁই হয় নানির কাছে কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ৪/৫ বছর পর তার নানিও মারা যান। এরপর ঠাঁই হয় মামার কাছে। শুরু হয় মামির হাতে অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনে মধ্যেই অনেক কষ্টে বড় হয় ফারজানা।
বলছি আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের কলিমাখালি গ্রামের ফারজানা আক্তার তুলির গল্প। জন্ম থেকে যার সংগ্রাম শুরু হয়েছে। তার সংগ্রামের শেষ নেই। মামা-মামির নির্যাতনের মধ্যে বড় হওয়া ফারজানার বিয়ে হয় পাশের গ্রামের আশারাফুল আলমের সাথে। স্বামী, শ^শুর-শাশুড়ির নিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো। কিন্তু হঠাৎ তার স্বামী অসুস্থ হয়ে গেলে ডাক্তার দেখানোর পর জানা যায় তার স্বামীর পেটের নাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার মানুষের সহযোগিতায় তার স্বামীর চিকিৎসা হলেও পুরোপুরি সুুস্থ আর হয়ে ওঠেনি। শুরু হয় ফারজানার আবার সংগ্রাম। স্বামীর চিকিৎসা ও সংসার চালানো কষ্টের হয়ে ওঠে ফারজানার। একমাত্র মেয়েকে পড়ালেখাও করানো দায় হয়ে ওঠে।
ফারজানারা এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায় বারসিক ও নেটজ বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকল্প। প্রকল্প থেকে পাওয়া সেলাইমেশিন, ছাগল ও হাঁস, মুরগিতে তার কষ্ট কিছুটা দূর হয়। দিনমুজরি করে খাওয়া ফারজানার নিজের একটা কাজের ব্যবস্থা হয়। এখন ফারজানা সেলাইমেশিনের দর্জির কাজ করেন। সাথে বাড়িতে ছাগলও হাঁস-মুরগি পালন করেন।
ফারজানার বাড়িতে এখন সবজি, ছাগল ও হাঁস-মুরগিতে ভরা। অল্পদিনেই কষ্টকে জয় করতে পেরেছেন ফারজানা। তার বাড়িতে বর্তমানে ৫টি ছাগল, ১২টি মুরগি, একটি ভেড়া ও বারোমাস সবজি চাষ হচ্ছে। হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসারে খরচ করছেন। সবজি নিজেরা খাচ্ছেন এবং বিক্রিও করছে। এভাবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফারজানা আক্তার তুলি।