কবুতর পালন থেকে আমার বাড়তি আয় হচ্ছে

রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন 

তরুণরা আগ্রহ করে যে কাজেই করুক না কেন তাতে সাফল্য পাবেই। কারণ তরুণরা সব সময় পরিবর্তন আনে তাদের তারুণ্য দিয়ে। পবা উপজেলার, দর্শনপড়া ইউনিয়নের, বিলধর্মপুর গ্রামের এমনই একজন তরুণ মোঃ মিজানুর রহমান। বয়স ২১ বছর। অনার্স ১ম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বাবা মা ও দুই ভাই নিয়ে তাদের সংসার।

মিজানুর রহমান বাবার সাথে কৃষি কাজে ও চালের ব্যবসায়ে সহযোগিতা করতো। মহামারী করোনাকালিন সময়ে অনেক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মিজানুর রহমান তাদের মধ্যে একজন। করোনার সময়ে শিক্ষাথীদের লেখাপড়া যখন থমকে গেল তখন বাড়িতে  বসে থেকে সময় যেন যাচ্ছিল না তার। বাড়িতে থেকে কিছু একটা করার কথা ভাবছিল মিজানুর। সে সময় শামিম নামের একজন প্রতিবেশী বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অনেক কবুতর দেখতে পেল। কবুতর দেখে তার অনেক ভালো লাগলো। তার মনে ইচ্ছে জাগলো সেও কবুতর পালন করতে পারে, কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারে।

এভাবে তার কবুতর পালনের শখ তৈরি হলো। বন্ধুর সহযোগিতায় মিজানুর একটি সুন্দর সুবিশাল খাঁচা তৈরি করলো এবং তার বাড়ির ছাদের উপর খাঁচা রাখল।  প্রথমে দুই জোড়া গিরিবাজ কবুতর কিনলো ও প্রতিবেশী বন্ধু এক জোড়া গোবিন্দ কবুতর তার সাথে বিনিময় করে। সেই শখের বসে কবুতর পোষা শুরু মিজানুরের। মিজানুর জানায়, কবুতরের খাদ্য হিসেবে ধান, গম, চাল দেন, যা তাদের জমি থেকে উৎপাদিত হয়। তাকে বাজার থেকে কিনতে হয়না। প্রথমে ৩ জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করেছিল। এখন তার ৫০টি কবুতর রয়েছে। গোবিন্দ ও গিরিবাজ দুই জাতের কবুতর রয়েছে তার।

এই প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘কবুতরগুলোর উপর আমার খুব মায়া পড়ে গেছে। বিকাল বেলায় আমি কবুতরের সাথে অনেক আনন্দ করি। তাদের হাতে নিই ও নীল আকাশে উড়াই। অনেক আনন্দ পাই। কবুতরগুলোকে খেতে দিয়ে যখন ডাকি তখন মনে হয় সবাই আমার কথা শুনে। একসাথে ঝাপিয়ে পড়ে খাবারের উপর! তখন দেখতে কিজে ভালো লাগে। সখ করে কবুতর পোষা শুরু করলেও কবুতর থেকে আমার বাড়তি আয় হচ্ছে। কবুতরের বাচ্চা খেয়ে আমাদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে ও অবশিষ্ট বাচ্চা ও কবুতর থেকে মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে, যা আমার লেখাপড়া ও নিজের অনান্য খরচ বহনে কাজে লেগেছে। বাবার কাছে যেকোনো প্রয়োজনে টাকা নিতে হচ্ছে না।’

মিজানুর জানায়, কবুতর পালন খুব একটা কষ্টের না বিধায় লেখাপড়া করতে কোন সমস্যা হয় না। অবসর সময়ে কবুতরের যত্ন নিতে পারি। আমার কবুতর পালন দেখে আমার দুই বন্ধু তিন জোড়া করে কবুতর নিয়ে পোষা শুরু করেছে। কবুতরের খাবার খরচ কম হওয়াই সহজেই যে কেউ কবুতর পালন করতে পারে। মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘সখের পাশাপাশি বাড়তি আয় হবে এখান থেকে। তাছাড়া কবুতরের থাকার তেমন বড় জায়গা প্রয়োজন হয়না। গ্রাম অঞ্চলে খাঁচার পাশাপাশি ঘরের ছাউনির নিচে মাটির হাড়ি টাঙ্গিয়ে কবুতর পালন করা যায়।‘

happy wheels 2

Comments