আমরা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের প্রতি যত্নশীল হবো

মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দয়ের লীলাভূমি আমাদের এই বংলাদেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশই আমাদের এ দেশকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়। নদীমাতৃক এই দেশে সোনার মাটিতে সোনা ফলে। ষড় ঝৃতুর প্রকৃতিক বৈচিত্রের সাথে পরিবর্তিত রূপ, রস ও গন্ধে  বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা চলমান। এই দেশের মানুষ প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করেই এগিয়ে চলে সামনের পথে। প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাদ দিয়ে এ দেশের মানুষর জীবনধারণ বলতে গেলে অসম্ভব। তবে নানা কারণেই প্রকৃতির সাথে মানুষের এই বন্ধন ছিন্ন হতে চলেছে। উন্নয়ন ও লোভের কারণে প্রকৃতিকে তছনছ করতে পিছপা হয় না অনেকে। ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি থেকে মানুষ অতীতের মতো সব ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান ও উপকরণ আর পাচ্ছে না। মানুষ এখন তাই অনেকটা বাজারনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে জীবনযাপন থেকে শুরু করে চাষবাস করার জন্য!

Sha
তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করানো দরকার। প্রকৃতি কীভাবে মানুষের প্রায় সব ধরনের চাহিদা পূরণ করেছে সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন যাতে করে তারা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের প্রতি যত্নশীল হয়। মূলত সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় নতুন প্রজন্ম ও অভিভাবক উদ্বুদ্ধ করার জন্য সম্প্রতি মানিকগঞ্জে আয়োজিত হয়েছে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে প্রকৃতির উপাদান তথা গাছপালা, নদ, নদী, বিভিন্ন প্রাণীসহ মাটি ও ফসল আঁকতে বলা হয়। আরেফা মডেল একাডেমী এবং বারসিক যৌথভাবে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিযোগিতায় ৪র্থ শ্রেণীর ৫১ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী নিজেদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে রঙের আচঁড়ে নিজ গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ, গাছপালা, নদী, বিভিন্ন প্রাণী তুলে ধরে।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অজর্নকারী সুমাইয়া আক্তার বলে, “আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার মাধ্যমে বেঁচে থাকি। প্রকৃতি আমাদেরকে শিক্ষা  দিয়ে থাকে । আমরা বিনা প্রয়োজনে গাছের পাতা ছিড়বো না, পাখির বাসা ভাঙবো না। আমাদের চারপাশ আমরা ভালো রাখবো।“ কৃষক আলীমুদ্দিন মিয়া বলেন, “এই দেশের প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদানই আমাদের জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা আমাদের জীবনকে Sha-1রাঙিয়ে তুলি। প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করেই আমরা কৃষিকাজ করি। প্রাকৃতিক নদী, নালা হাওয়র ব্ওার থেকে মাছ সংগ্রহ করেই আমিষের চাহিদা পূরণ করি।” কৃষক আাশরাফ আলী মোল্লা বলেন, “মাটিতেই আমদের জন্ম, মাটিতেই আমাদের শেষ আশ্রয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের আনন্দ দান করে। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাধ্যমেই আমরা আমাদের জীবিকা সংগ্রহ করি। কিন্তু আমরা এই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতিদানে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতির কারণ  হয়ে উঠি। আমরা নিজেরাই হয়ে যাই অকৃতজ্ঞ।” শিক্ষক মো. আল মামুন হোসেন বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দযের অন্যতম হচ্ছে বনরাজি ও বৃক্ষ। সবুজ গাছ আর তরুলতা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। বৃক্ষ যেখানে আমাদের পরমবন্ধু সেখানে গাছের প্রতি আমরা হয়ে য়াচ্ছি ভালোবাসা হীন। আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করছি।” তিনি আরও বলেন, “গাছের অবদানকে আমরা মূল্যহীন করে দিচ্ছি। আমরা গাছ কর্তন করে পরিবেশ দূষণকারী তামাক শুকাচ্ছি, বানাচ্ছি ইট। মোস্তাফিজুর রহমান মিলন বলেন, “প্রকৃতি ও পরিবেশের গুনাগুণ নষ্ট হলে পরিবেশের ভারসাম্য থাকবে না, পরিবেশ বিপর্যয় হবে। আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ গাছপালা, বন, জঙ্গল, মাটি, পানি, বাতাস, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার ও গুনাগুণ বজায় রাখার মাধ্যমে পরিবেশকে সুস্থ ও সুরক্ষা করতে পারি।”

উল্লেখ্য যে, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভায় অংশ নেন ছোট কালিয়াকৈর কৃষক শ্রমিক সমাজ সেবা সংঘের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস, কৃষক মো. আলিমুদ্দিন মিয়া, মো. মনিরুজ্জামান ব্যাপারী, কৃষক মো. দারোগ আলী, মো. আশরাফ আলী মোল্লা, মো. মনির হসেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

happy wheels 2

Comments