ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়
রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। মানুষ যদি ইচ্ছা করে তাহলে তারা যেকোন কিছুকে জয় করতে পারেন। অনেক মানুষ তা প্রমাণও করেছেন। দরিদ্র পরিবার থেকেও অনেকে পরিশ্রম করে উচ্চশিক্ষা লাভ করে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে যেমন কাজ করেছেন তেমনিভাবে ইচ্ছাশক্তির জোরেই অনেকে পাহাড়, পর্বত আরোহন, লেখাধুলায় সাফল্য এবং বিভিন্ন বিষয়ে পা-িত্য লাভ করেছেন। আবার অনেকেই আছেন সামান্য পুঁজি নিয়েও ইচ্ছাশক্তি ও মনের জোরে সফল ব্যবসায়ী হতে পেরেছেন। প্রতিকূলতা, দারিদ্র্যতা কিংবা মেধাহীনতা বা শারীরিক প্রতিবন্ধীত্ব কোনভাবেই মানুষের বাধা হতে পারেনি। এই লেখায় তেমনই একজন অধ্যবসায়ী, উদ্যমী ও শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি ধারণকারী মানুষের কথায় বলা হচ্ছে।
তিনি হচ্ছেন রাজশাহীর তানোর পৌরসভার ঠাকুর পুকুর গ্রামের আব্দুল মান্নান (৫৭)। আব্দুল মান্নানের নিজস্ব জমি জমা বলতে কিছুই নেই! তবে আছে প্রচ- ইচ্ছাশক্তি ও মনের জোর। তাঁর ইচ্ছা দারিদ্র্যতার মাঝেও সন্তানের লেখাপড়া করাবেন। তাই জমিজমা না থাকার পরও ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যমের কারণে থেমে থাকেনি তার জীবন ও সংসারের চাকা! জীবিকা অর্জন ও সন্তানের শিক্ষিত করে তোলার জন্য লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটেন পেপার-পত্রিকা বিক্রি করতে! প্রতিদিনের পত্রিকা বিক্রির জন্য সাইকেলযোগে হাট-বাজার, অফিস,পাড়া-মহলা ও বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ান। খবরের কাগজ বিক্রি করেই পরিবারের সকল চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। আব্দুল মান্নান বিভিন্ন অফিস ও দোকানে পেপার পৌছে দেয়ার পরও তিনি রাত পর্যন্ত তানোর থানা মোড়ে অতিরিক্ত পেপার বিক্রি করেন।
তার এই ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের গুণে তিনি কোন সন্তানকেই নিরক্ষর করে রাখেননি। তার বড় ছেলে তসলিম উদ্দিন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলের স্বপ্নও বড়। সেও তা বড় ভাইয়ের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। এজন্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় অবস্থান করছে। একমাত্র মেয়ে তানোর আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রী কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। মেয়েকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্নও দেখছেন অদম্য সংগ্রামী মান্নান। সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার ছেলেদের সাথে আমি বন্ধুর মত আচরণ করি, তারাও তাদের ভালো, মন্দ, অভাব-অভিযোগ সবকিছু আমার সাথে সহভাগিতা করে। এর জন্য তাদের সাথে আমাকে সময়ও দিতে হয়।” দুই ছেলে এবং এক মাত্র মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খাওয়া মানুষটি বলেন, “আমি স্বার্থক তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরে, কারণ আমার ছেলে আমার সাথে পত্রিকা বিক্রির কাজে সহায়তা করেও তানোর কলেজ থেকে শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জন করেছেন। সেখানে অনেক অফিসার ও প্রভাষকদের সন্তানরাও তা পারেনি।”
এমন পেশায় তার কোন কষ্ট হয় কি না জানতে চাইলে তিনি মৃদু হেসে বলেন, ’সব সহ্য হয়ে গেছে। একদিন পেপার-পত্রিকা নিয়ে বাহিরে বের না হলে ভালো লাগে না। পেপার-পত্রিকাই যে আমার নিত্য দিনের সঙ্গী।’ লেখাপড়ার পাশাপাশি ছেলেরা যখন পেপার বিক্রির কাজে সহায়তা করেন তখন তাদের সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হয়নি বরং লেখাপড়ার কাজেও সহায়তা পেয়েছে তারা। কারণ প্রত্যেক পেপারে চোখ দিতে হতো এবং পড়তে হতো তাকে। ফলে বাংলা এবং ইংরেজি অনেক দ্রুত পড়তে পারে।”
সকল শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আর মনের শক্তি দিয়ে সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।’