তানোরের বিনোদন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনা শিবনদীর বিলকুমারী বিল
রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
নদীর কাছে এলেই মানুষ প্রশান্তি খুঁজে পায়। নদী যেন উজাড় করে দেয় প্রকৃতির নিঃসীম সৌন্দর্যবোধ। তাই হয়তো নদী পাড়ের মানুষ যেমন নদী পাগল হয়, তেমনি ভ্রমণপিয়াসী মানুষ বারবার ছুটে আসে নদীর কাছে। ব্যস্ত নগরের দুর্বিসহ কোলাহলময় জীবনে তাই কিছুক্ষণের জন্য প্রশান্তির সুবাতাস বসে আনে এই নদীর উষ্ণ হাওয়া। তেমনি একটি নদী শিবনদী। আর তার বুক চিরে সুতোর মতো প্রবাহিত বিল বিলকুমারী।
নদী আর প্রকৃতি এই দু’য়ে মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যবর্ধন করেছে জেলার তানোর উপজেলার বিলকুমারী বিল। ফলে প্রতিদিন বিলকুমারির সেতু, তার সংযোগ সড়ক ও পাশের বাঁধ এলাকাজুড়ে হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাই ঈদ এলে এখানে উপচে পড়ে মানুষের ঢল। আশে পাশের উপজেলাসহ জেলা শহর থেকেও অনেকে এখানে ছুটে আসেন দুদন্ড বিনোদনের জন্য। এতে করে উপজেলার এ এলাকা ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
বিলকুমারী বিল মনোরম প্রকৃতিক দৃশ্য এরি মধ্যে মনোমুগ্ধ করেছে অগণিত বিনোদনপ্রেমী মানুষের মন। চারিদিকে জল। জলের মধ্যে মধ্যে দলের গুচ্ছ। তারই মাছে ছোট্ট-বড় ডিঙি নৌকায় বিনোদনমেপ্রমীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমস্ত বিল। একইসঙ্গে শিবনদীর উপর সেতুটি জেলার তানোর ও মোহনপুর দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে সেতুবন্ধন। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবের দিনে বিনোদন প্রিয় হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে এক নজর দেখার জন্য তানোরের শিবনদীর বিলকুমারির নর্বনিমিত সেতু ও নদীর অপরূপ সৌন্দর্যকে অবলোকন করার জন্য। অনেকেই একটু স্বস্তিতে জিরিয়ে নেন শিব নদীর নিঃসীম সৌন্দর্যবোধ। প্রাণ খুলে অনেকই ফেলেন স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস।
জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে এ শিব নদী যৌবন ফিরে পেলেও শুকনো মৌসুমে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে পরিণত থাকে। নদীর বিস্তৃর্ণ চরে ঘুরে বেড়ায় গরু-মহিষ, ভেড়া। তাদের সঙ্গে দেখা মিলে রাখালের বন্ধুত্ব। অনেকেই প্রথম দর্শনে অকপটে বলেছেন, বিলকুমারী বিলজুড়ে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তাই অনায়াসেই রাজশাহীর মধ্যে এখানে অন্যতম হয়ে উঠতে পারে একটি চমৎকার পর্যটন স্পট।
তানোর উপজেলার শিব নদীর বিলকুমারী এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আশাবাদী স্থানীয়রাও। তাদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি উদ্যোগেই সম্ভব এ স্পষ্টকে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা। জেলা শহর থেকে মাত্র ২৯ কিঃমিঃ দূরে তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়াহাট। গোল্লাপাড়া হাট থেকে পাঁয়ে হেঁটে বা ভ্যান গাড়িতে চেপে মাত্র আধা কিঃ মিঃ গেলেই বিলকুমারী বিলে যেতে রাস্তার দু’পাড়ের মনোরম দৃশ্য যে কারোই মন কাড়ে। এখানে রয়েছে শিব নদীর উপর ২১৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ সেতু। ওই সেতু থেকে উপভোগ করা যায় নদীর মনোরম দৃশ্য। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ভিড় করে এখানে। জেলেদের মাছ ধরা আর নৌকার সারি, বাঁধের ধারে প্রকৃতির অরণ্যে নিরালা পরিবেশ উপভোগ করেন আগত দর্শনার্থীরা। বিকেল বেলায় ওই বাঁধে ঢল নামে সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের।
বিলকুমারীতে বেড়াতে আসা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করেছেন এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য। পার্শ্বের উপজেলাগুলো থেকে সেতুর আশেপাশে ইতিমধ্যেই স্থানীয় জেলেরা নৌকা নিয়ে আগত মানুষদের নদী ভ্রমণ করাচ্ছেন। বিনিময়ে তারা নিচ্ছেন জনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ভাড়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই শিবনদীর সেতুকে ঘিরে। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। বসেছে হরেক রকমের দোকানপাট। স্বপরিবারে অনেকই আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এই বিনোদন প্রিয় স্থানটিতে।
ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অঘোষিত ভাবে হয়ে উঠেছে অন্যতম বিনোদন স্পট। প্রায় সারাবছরই এখানে বিভিন্ন বনভোজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের আনাগোনো থাকছে। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ স্থানটির সম্ভাবনাময় পর্যটনের বিকাশ ঘটছে না, এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা। বরেন্দ্রভূমি খ্যাত জেলা রাজশাহীর শিবনদীকে ঘিরে সরকারিভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থানের। সেই সঙ্গে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল, এমনটাই মনে করে স্থানীয় সচেতন মহল।
তানোর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর সংযোগ সড়ক সুগম করতে পুনরায় চলতি অর্থবছরে রাজশাহী এলজিইডি অফিস থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্শ্ববতী দুই উপজেলার মিলবন্ধন এই সেতুটি চলাচলা শুরু হওয়ার ফলে তানোর থেকে মোহনপুর হয়ে নওগাঁ যাওয়া যেমন সহজ হয়েছে। পক্ষান্তরে, রাজশাহী মোহনপুর হয়ে তানোর সদর দিয়ে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর যাতায়াতও অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে।’ এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির কেন্দ্রস্থল হতে পারে বিনোদন কেন্দ্রের জন্য একটি উপযোগী স্থান এমনটিই মনে করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে নিয়ে কথা হয় তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই স্থানটিতে শিশুদের জন্য পার্কসহ বিনোদন প্রেমীদের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে বরাদ্দ সংকট ও রাজনৈতিকভাবে বিরোধী মর্তাদশের হওয়ায় তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে স্থানীয় সাংসদ (এমপি) মহোদয় এ বিষয়ে একটু আন্তরিকতা দেখালে কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ এগিয়ে আসলে এখানে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব বলেও জানান এ মেয়র।