শ্যামনগরে দৃশ্যমান হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে গাজী আল ইমরান
সারাদেশে ভূমিহীনদের পুর্নবাসনে তৈরি হয়েছে গুচ্ছগ্রাম। এর মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং নদী ভাঙনের ফলে দুর্গত পরিবারকে সরকারি খাসজমিতে তৈরিকৃত ইকো-ভিলেজে বসতভিটাসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে অথবা একক নামে কবুলিয়্যাত প্রদান করে দারিদ্র্য বিমোচন অথবা নারী অধিকার নিশ্চিত করা, পুর্নবাসিত পরিবারগুলোকে সামাজিক সুরক্ষা দেয়া, শিক্ষা, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও দীর্ঘমেয়াদী পুকুর লিজ প্রদান করাসহ আয় বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয় গুচ্ছগ্রাম। এরই প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়লীনি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পানখালি গুচ্ছগ্রাম তৈরি হলেও এখানে ছিলো নানাবিধ সমস্যা।
কিন্তু বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নতুনভাবে সাজতে শুরু করেছে গুচ্ছগ্রাম। উপজেলা প্রশাসনের নতুন নতুন কর্মসূচি ও কর্মকান্ডে গুচ্ছগ্রামের মানুষের দিন বদলের পালা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গুচ্ছগ্রামের ৪০ ঘর মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সমাপ্তি ঘটেছে। বিগত কয়েকদিন আগে কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় “বালুর কনায় আটকে গেছে সবুজায়ন ” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে গুচ্ছগ্রামের উঠানে মাটি ভরাটের নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল ইতিমধ্যে উঠানে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছেন। এরমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান গুচ্ছগ্রামকে সবুজায়নে পরিণত করতে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ রোপণ ও সবজি বাগান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি গুচ্ছগ্রামে বসবাতরত প্রত্যেক পরিবারকে নিজ তত্বাবধায়নে একটি করে নারিকেল গাছের চারা দিয়েছেন।
এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক গুচ্ছগ্রামের একমাত্র পানির আঁধার পুকুরটি লোনা পানি থেকে মিষ্টি পানিতে পরিণত করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলে পুকুরের পানি অনেকাংশে মিষ্টি পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাছাড়া সবুজ গুচ্ছগ্রাম তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের বাড়ি গোছাতে গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত নারী পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সবজি বাগান। তারা এখান থেকে উৎপাদিত সবজি থেকে কিছুটা হলেও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারছেন বলে জানা যায়।
পানখালি গুচ্ছগ্রাম বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, ‘পানখালি গুচ্ছগ্রামের উন্নয়নে আমি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া বালির কারণে তাদের প্রত্যহ জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বালির উপরে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেছি।’ গুচ্ছগ্রাম কমিটির সভাপতি সেকেন্দার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পানির কষ্ট আমাদের সমস্যার মধ্যে অন্যতম। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ আশা করছি।’ গুচ্ছগ্রামের খাওয়ার পানির সমস্যা সমাধানে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএমএ সোহেলের সাথে কথা হলে এই জনগোষ্ঠীর পানির সমস্যা সমাধানে পাবলিক হেলথ কর্মকর্তার সাথে আলাপান্তে সমাধানের কথা বলেন।
উপজেলা পাবলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি এখানে বসবাসরত ৪০ ঘর মানুষের পানির সমস্যা সমাধানে রেইন ওয়াটার হারভেষ্টিং তৈরির পরিকল্পনার কথা বলেন এবং শীঘ্রই এটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানান। গুচ্ছগ্রামের উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের মানুষের কল্যাণে সরকার যথেষ্ট তৎপর, এই জনগোষ্টীর জীবন মান উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, গুচ্ছগ্রামটি দৃশ্যমান করতে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, ইতিমধ্যে তাদের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে পল্লী বিদ্যুতের উপর মহলের সাথে কথা হয়েছে।’