হাওরের ‘ডেমিধান’ বোনাস পেয়ে লাভবান কৃষকরা
নেত্রকনো থেকে মো. অহিদুর রহমান
জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ। জলবায়ু পরিবর্তন। তপ্ত বাতাস। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হাওর, পাহাড়, সমতলসহ দেশের মানুষের জনজীবন। এসময় হাওরের নদী, খাল, ডোবায় পানিতে ভর্তি থাকে। চিরাচরিত নিয়মে হাওরের মানুষ মাছ ধরার জন্য নদীতে সারাক্ষণ বিচরণ করেন এ সময়ে। ট্রলারের মালিকগণ ট্রলার দিয়ে যাত্রী পরিবহনের জন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু হাওরে এখন ভিন্ন চিত্র। কৃষকেরা একই জমিতে দ্বিতীয়বার ধান কাটাতে ব্যস্ত। যাকে বলা হয় ডেমিধান। এখনো পানি আসেনি হাওরে। বোরো ধান কাটার পর সেই ধান গাছের গোড়ায় আবারো বের হয়েছে সোনালি রঙের চকচকে ধানের শীষ। একই গাছে দ্বিতীয় দফায় উৎপাদিত এ ধান কৃষকের কাছে ‘ডেমিধান’ নামে পরিচিত। এবছর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারণে কৃষকের ঘরে সোনার ফসল উঠেছে। উঠেছে ‘ডেমিধানের’ বোনাস ফলন।
জানা গেছে, ধানের পাশাপাশি গোখাদ্য হিসেবে খড় সংগ্রহ করেছেন কৃষকেরা। ডেমিধানের ফলন হাওর কৃষিতে যোগ করেছে আরেকটি নতুন মাত্রা। প্রান্তিক কৃষক ও ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক পরিবারের অসম্পূর্ণ গোলার শূন্যতা পূরণ করেছে ডেমিধান। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে এসব জমির কাটা ধান গাছের গোড়ায় ১৮-২০ দিন পর আবারো ধানের শিষ বেরোয়। ২৫-৩০ দিনের মধ্যে সেই ধান কাটা যায়। ফলন কম হলেও এ ধানে কোনো চিটা থাকে না। আকারে আগের চেয়ে কিছুটা ছোট এ ধানের চালের ভাত খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
মদন উপজেলার তলার হাওর, কেন্দুয়া উপজেলার জালিয়ার হাওর, কুবিজানা হাওর, মহিষের হাওর , মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা হাওরসহ আশেপাশের হাওরগুলোতে গত ১৫ দিন ধরে চলছে ডেমিধান কাটার কাজ। প্রায় সবখানেই কমবেশি ডেমিধান কাটা চলছে। সাধারণত স্বচ্ছল বা ধনী কৃষকরা এ বছরে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে মহাখুশি। এখন ক্ষেতের “ডেমিধান” নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে আশপাশের ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকেরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকটা নীরবে কেটে ঘরে তুলছেন এ ‘ডেমিধান’। পাশাপাশি দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক নিজেদের জমিতে যেটুকু ডেমিধানের ফলন হয়েছে তা কেটে ঘরে তুলছেন।
বোরো ফসল ওঠানোর পর এসময় হাওরের কৃষকের সাধারণত কোন কাজ না থাকায় অসল সময় কাটায়। ফলে কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে চলে যান। কিন্তু কিন্তু এ বছর হাওড়ে দেরিতে পানি আসায় এসব মানুষ ডেমিধান কাটতে পারছেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতে পারায় তাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। উচিতপুর গ্রামের রফিকুল, আ: কাদির, গোবিন্দশ্রী গ্রামের আবুল কালাম, হান্নান মিয়া, ইদু মিয়া জানান, ডেমিধান আমাদের জন্য বাড়তি পাওনা। এ সুযোগ গত ২৫ বছরের মধ্যে দেখা যায় নাই। অনেক আগে এরকম হতো। এবছর আবার হলো।
হাওড়ে এখনো পানি না আসায় আগাম জাতের ধান ক্ষেতগুলোতে দ্বিতীয় দফার ফলনে কৃষক লাভবান। কারণ দ্বিতীয় দফার এ ফলনের জন্য কৃষকের অর্থ বা শ্রম কোনোটাই বিনিয়োগ করতে হয়নি। তাই একে কৃষকের বোনাস হিসেবে অভিহিত করা যায়। মৌলা মিয়া জানান, মদন উপজেলায় প্রায় ১৫০০ একর জমিতে জমিতে ডেমিধানের ফলন হয়েছে। প্রতি কাঠায় ধান হয়েছে ২ থেকে তিন মণ।