আমাকে পারতেই হয়
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
বয়সকে হার মানিয়ে জাচিন্তা হাসদা (৭০) সচল রেখেছেন সংসারের চাকা। নিজে যা আয় করেন সব চলে যায় স্বামীর ঔষধের খরচে। এখন প্রতি সপ্তাহে বাঁশ কিনে ৬দিন কাজ করে একদিন তা হাটে বিক্রয় করে স্বামীর জন্য ঔষধ ও সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে আনেন। এভাবেই চলছে ৩৫ বছর। স্বামী ফাইন মূর্মু (৭৫) একটি সড়ক দূর্ঘটনায় পা হারিয়ে ৩০ বছর ধরে প্রতিবন্ধীতার জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তেমন কোন কাজ করতে পারে না। জাজিন্তা এখন বসবাস করেন রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার মন্ডুমালা মাহালীপাড়া গ্রামে।
জাচিন্তা হাসদার যখন বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। ভালোই চলছিলো সংসার। একটি ছেলের আশায় একে একে চার মেয়ে আসে তাঁদের সংসারে। স্বামী তখন কৃষিশ্রমিক ও মাহালীদের আদি পেশা বাঁশ-বেতের কাজ করে সংসার চালাতেন। স্বামীর কাজে সহযোতিা করতেন জাতিন্তা হাসদা। এভাবে ভালোই চলছিলো। একে এক মেয়েদের অল্প বিস্তর পড়ালেখা করিয়ে তিন মেয়ের বিয়েও দিয়ে দিলেন। এবার একটি সড়ক দূর্ঘটনায় পা হাড়ালেন স্বামী। সংসারে আসল যুদ্ধে নিজেকে আবিষ্কার করলেন জাচিন্তা।
সংসারে যা কিছু সঞ্চয় ছিলো সবই গেল স্বামীর চিকিৎসায়। কুল কিনারা না পেয়ে নিজেই পুরোদমে শুরু করেন আদি পেশা বাঁশের তৈরি ডালা, সাজি, ঝাকা, সরপস, কুলা, টুপা বানানোর কাজ। সারা সপ্তাহ বানিয়ে সোমবার করে পাশের মন্ডুমালা হাটে বিক্রয় করেন। কোন সপ্তাহে ৮০০ টাকা কোন সপ্তাহে ১০০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে টানাটানির সংসার। এই টাকা দিয়ে কাজের উপকরণ বাঁশ কিনে, স্বামীর ঔষধ কিনে চাল-ডাল, তেল-লবণ কিনে দিনে দুবেলা খাবারের জোগার হয়।
জাচিন্তা হাসদা কষ্টের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘আবার ভাগ্য আমাকে এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে এসছে। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এভাবে চলবে। আসলে এখন আমাকে পারতেই হবে। মরে গেলে তো আর পারব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি বারসিক কর্মী রিনা টুডুর কাছে কৃতজ্ঞ যে আমার স্বামীর বয়ষ্ক ভাতা পেতে সহযোগিতা করেছেন। এখন স্বামীর কিছু ঔষধের টাকা ওখান থেকে আসে।’
নারীরা একটি সংসারে কত বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। জাচিন্তা হাসদার মত মানুষেরা এর সব থেকে বড় উদাহরণ। ভালো থাকুক জাচিন্তা হাসদার মত মানুষেরা!