জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে কর্মকার নারী সংগঠনের উদ্যোগ

নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস। এবারের জাতীয় শিশু দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন হোক রঙিন”। একই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মদিন হওয়ায় সারাদেশে সরকারি/বেসরকারী উদ্যোগে এবং দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আগামীকাল ১৭ মার্চ দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মহা ধুমধামে উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, মেলা ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য এসব আয়োজন সেই শিশুরাই প্রতিবছর এসব অনুষ্ঠান উপভোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। শহরাঞ্চলের শিশুরা পিতামাতার সাথে এসব অনুষ্ঠান ও মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও গ্রামাঞ্চলের শিশুরা সব সময়ই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।


আজ ১৬ মার্চ নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামের কর্মকার (কামার) সম্প্রদায়ের ‘লোহা লক্কর নারী সংগঠন’র উদ্যোগে গ্রামীণ কিন্ডার গার্টেন স্কুল পর্যায়ে কামার জনগোষ্ঠীর শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণীর শিশুদের অংশগ্রহণে জাতীয় শিশু দিবস ২০২২ উদ্যাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে শিশুদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশুদের দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্লেকার্ড প্রদর্শন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অংশগ্রহণকারী শিশুরা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতি সৌধ, জাতীয় পতাকা, স্বপ্নের গ্রাম ও জাতীয় ফুলের ছবি আঁকে। শিশু ও নারীরা সকল শ্রেণীর শিশুদের সমান সুযোগ পেয়ে নিরাপদে বেড়ে ওঠার জন্য বেশকিছু দাবি-দাওয়া প্লেকার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরে। প্লেকার্ডে শিশুরা যেসব দাবিগুলো তুলে ধরে তার মধ্যে-আমার গ্রামকে পরিষ্কার দেখতে চাই, সকল পেশার জনগোষ্ঠীর শিশুদের বিদ্যালয়ে যাবার সমান সুযোগ চাই, নদীতে মনের আনন্দে সাতার কাটতে চাই, মাদকমুক্ত ও শিশু নির্যাতন মুক্ত সমাজ চাই, সকল শিশুদের নিরাপদে বেড়ে ওঠার সুযোগ চাই ইত্যাদি দাবিগুলো ছিল অন্যতম।


দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নারীদের অংশগ্রহণে সংগঠনের সভাপতি অঞ্চনা রানী কর্মকার এর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস মনি রানী সরকার। আলোচনা সভায় জাতীয় শিশু অধিকার নীতিমালা, শিশুদের উপর সকল ধরণের নির্যাতন বন্ধে শিশু নির্যাতন দমন আইন, শিশুবান্ধব বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষাদান চালুকরণ, শিশুবান্ধব সমাজ গঠনের উপর জোড় দেওয়া হয়।


আলোচনায় বক্তাগণ ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কাজে না দেয়া এবং সকল শ্রেণী ও বয়সের শিশুদেরকে শিক্ষার সুযোগ দান এবং শতভাগ শিক্ষা বৃত্তি/উপবৃত্তির আওয়ায় নিয়ে আসার দাবি জানান। কর্মকার নারী সংগঠনের সভাপতি অঞ্চনা রানী কর্মকার সম্প্রদায়ের শিশু শিক্ষার্থীদেরসহ সকল শিক্ষার্থীদের শতভাগ শিক্ষা উপবৃত্তির আওতা নিয়ে আসার জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। তিনি বিশেষভাবে কর্মকারসহ সকল পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির দাবি জানান।


প্রধান অতিথি গ্রামীণ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনি রানী সরকার তার বক্তব্যে বলেন, ‘একজন শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন সেসব থেকে এখনকান শিশুরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, নেই বিনোদনের ব্যবস্থা, শিশুদের প্রতিভা বিকাশের নেই তেমন কোন উদ্যোগ। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে ভালো ফলাফল করা যাবে তার উপর বেশি প্রধান্য দেয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের সার্বিক প্রতিভা বিকাশের উপর তেমন কোন গুরুত্ব প্রদান করা হয়না। বর্তমান সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। এই শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। শুধু জিপিএ ৫ পেলেই হবেনা, এর পাশাপাশি সত্যিকারের শিক্ষার পাঠও নিতে হবে স্কুল থেকেই, যা, একজন শিশুকে বড় হয়ে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।”


তিনি নিজ বিদ্যালয়টিকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments