পরিবারিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাছলিমা আক্তারের
সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
সমাজ সংস্কৃতি ও পারিবারিক উন্নয়নের সাথে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নিজেদের সংগ্রাম সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সময়ের সাথে সাথে নারীরা নিজের গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে ভূমিকা পালন রেখে চলেছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামের তাসলিমা আক্তার (৩৩) তেমনই একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী।
স্বামী ও দুই সন্তানসহ ৪ সদস্যের ছোট্ট সংসার তাঁর। স্বামী হামিদ সানা (৩৯) পেশায় দিনমজুর। নিজেরা খাস জমিতে বসবাস করলেও বসতঘরের সামনে যেটুকু জায়গা আছে সেটাকে চাষ উপযোগী করে মৌসুমভিত্তিক নানা জাতের কৃষি ফসল উৎপাদন করে সংসারের আংশিক চাহিদা পূরণ করে তাসলিমা আক্তার। কিন্তু বাকি অংশ নির্ভর করতে হয় পুরোপুরি বাজারের উপর। অভাবের মধ্য থেকে নিজেই খুঁজতে থাকেন নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ। দিনমজুর স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চলছিল প্রতিদিনের সংসার।
২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে বাড়িতে আসেন নেটজ্ বাংলাদেশের সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্পের এক প্রতিনিধি। সুত্র ধরে যুক্ত হন পরিবেশ প্রকল্পের নয়নতারা সিএসওতে। বাড়িতে প্রাণীসম্পদ বলতে ছিল কিছু হাঁস-মুরগি।
প্রকল্পের সুবিধা অনুযায়ী আয়বর্ধনমূলক সম্পদ হিসেবে তাসলিমা আক্তার নিয়েছিলেন ১২ হাজার টাকার মাছ ধরার নৌকা, ১১৫ টাকার একটি ছবেদা ও একটি কদবেলের চারা। বাকি এক হাজার টাকার হাঁস ও মুরগি নিয়েছিলেন। পরিবেশ প্রকল্পের সাপ্তাহিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন ও আলোচনা শোনেন এবং তা নিজের পরিবারের কাজে লাগাতে থাকেন। এক এক করে নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি নানামূখি আয়ের উৎস তৈরি করতে থাকেন। এখান থেকে অল্প অল্পকরে জমানো টাকা দিয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন তিনি। বাড়িতে অনেকগুলা হাঁস, মুরগির লালনপালন শুরু করেছেন, শুরু করেছেন কবুতর পালন এবং নিজের বসতভিটার আঙ্গিনায় নিরাপদ শাকসবজি (টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেড়স, ধুন্দল, ঝিংগাসহ বিভিন্ন অচাষকৃত শাক) চাষ করছেন। বাড়ির সীমানায় লাগিয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ফলের গাছ। বাড়ির রান্নার উচ্ছিষ্ট অংশ, হাস মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে জৈব সার উৎপাদন করে শাকসবজি চাষাবাদ করছেন।
অল্প জায়গায় নানামুখি আয়ের উৎস তৈরি করছেন তাসলিমা আক্তার। তাসলিমা আক্তার পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো জেনে পরিবারের পুষ্টি যোগাতে সক্ষম হচ্ছেন এবং তার পরিবার নিয়ে ভালো আছেন।