নগর দূর্যোগ মোকাবিলায় বস্তিবাসীদের সক্ষমতা উন্নয়নের উদ্যোগ নিন
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি চাঁদ উদ্যান এর গ্রীনভিউ বিদ্যানিকেতনে ‘নগর দুর্যোগ এবং বস্তিবাসীর উপর প্রভাব’ বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় ২৮ জন অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ২১ জন পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির বাসিন্দা। কর্মশালায় বারসিক’র পক্ষ থেকে পাভেল পার্থ, জাহাঙ্গীর আলম, সুদিপ্তা কর্মকার এবং ফেরদৌস আহমেদ সহায়কের ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দীন, তমজিদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রামের পাশাপাশি শহরেও যে দূর্যোগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের উপর কিরকম প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয় কর্মশালায়।
কর্মশালায় সহায়ক হিসেবে বারসিক’র শিক্ষা, বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতি’র বিভাগের পরিচালক পাভেল পার্থ দূর্যোগ সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘কোন স্থানে কোন বিপদ ঘটার সম্ভাবনাকে আপদ বলে। আর ঘটনা ঘটে গেলে তাকে বিপদ বলে। বিপদ ঘটার পর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তাকে দূর্যোগ বলে। যেমন অতিবৃষ্টির ফলে পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এখানে অতিবৃষ্টি হচ্ছে আপদ, অতিবৃষ্টি হবার ফলে যে জলাবদ্ধতা হয় সেটা হলো বিপদ এবং এই জলাবদ্ধতার কারণে সেখানকার মানুষজনের অনেক ক্ষতি হয়, বিভিন্ন রোগ হয়, ঘর নষ্ট হয়ে যায়, রান্না করা যায় না আরও নানা ক্ষতি হয় তাকে দূর্যোগ বলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোন স্থানে কোন দূর্যোগ হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁিকতে থাকে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কারণ তাদের ঝুকিঁ মোকাবেলা করার ক্ষমতা কম থাকে, তাদের একদিকে অর্থের অভাব থাকে অন্যদিকে প্রযুক্তি এবং দক্ষতারও অভাব রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি দূর করা সহজ হয় যদি মানুষের জ্ঞান/ তথ্য, উপকরণ, অর্থ এবং প্রযুক্তি থাকে।’
আলোচনায় বস্তিবাসীরা বলেন, ‘পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তিতে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে জলাবদ্ধতা অন্যতম। এখানে পর্যাপ্ত ড্রেন নেই, বস্তির জায়গাটি তুলনামূলক নিচু এলাকায় অবস্থিত, যতটুকু ড্রেন রয়েছে তা ময়লা ফেলে আরও ভরাট করে ফেলা হয়েছে, অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই এবং অসময়ে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে চর্মরোগ, মশার বৃদ্ধি, জ্বর, ডায়ারিয়া, কলেরা, জন্ডিস হচ্ছে।’ তারা এই সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এই প্রসঙ্গে জান্নাত বেগম বলেন, ‘আজ আমরা বিভিন্ন দূর্যোগ সম্পর্কে বুঝলাম। একটি সমস্যা হলে সবাই মিলে কিভাবে সেই সমস্যাটির সমাধান করা যায় বা কার কাছে গেলে সমস্যাটি থেকে উত্তোরণ পাওয়া যায় সে বিষয়ে বুঝলাম।’ আছমা বেগম বলেন, ‘আমার কাছে অনুশীলনটি খুব ভালো লেগেছে এবং একত্র হয়ে কিভাবে কোন দূর্যোগকে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়টি শিখলাম।’
উল্লেখ্য, কর্মশালার শুরুতে বারসিক প্রকল্প সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম আবহওয়া, তাপমাত্রা, বায়ুরচাপ, বায়ুপ্রবাহ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘তাপই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক। আমরা তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই আপদ এবং দূর্যোগ আমাদের দেশের জন্য কম হবে। কিন্তু আবহাওয়ার এই পরিবর্তন আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে দিচ্ছে। এর কোন ভৌগোলিক সীমারেখা নেই। এটা একটি বৈশি^ক সমস্যা।’ আলোচনায় তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে হলে বাড়াতে হবে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, কারিগরী শিক্ষা, নারীশিক্ষা,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, সরকারী স্বাস্থ্যসেবা, বিনা বেতনে স্কুলে পড়াশোনা করা এবং ন্যায্য মুজুরি ইত্যাদি।’