পথ নাটক দিয়ে সচেতনতার উদ্যোগ
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
কথায় মানুষকে যতটা আকৃষ্ট করা বা বোঝানো যায়, তার চেয়ে কাহিনী, বিষয় বর্ণনা করা হলে মানুষের ভেতরে তা সহজেই প্রবেশ করানো যায়। যোগাযোগের এটি একটি বড় মাধ্যম। যার মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। নাটক তেমনই একটি যোগাযোগ মাধ্যম। একসময় মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে আমাদের সমাজের নানান সংকট, সম্ভাবনা আর অবস্থা তুলে ধরা হতো। দর্শকরা টানটান উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করতে একটার পর একটা চরিত্র ও তাদের পরিবেশনার জন্য। এই নাটকেরই আরেকটি মাধ্যম হলো ‘পথ নাটক’।
পথে পথে যে নাটক দেখানো হয়। খুব কম সময়ের মধ্যে শিক্ষণীয় কোনো বিষয় বা ঘটনা অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এই নাটকটিও দর্শকের সামনেই সরাসরি পরিবেশিত হয়। তবে এখানে কোনো মঞ্চ থাকে না। থাকে না দর্শকদের বসার জন্য সুব্যবস্থা। এই নাটক রাস্তার মোড়ে, বাজারে, গাছের নীচে বা কারো বাড়ির উঠানে প্রদর্শিত হতে পারে। এই নাটকের দর্শক হলো সমাজের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। পথ নাটক মূলত ওহঃবৎধপঃরড়হ বা মিথস্ক্রিয়ার জন্য জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সামাজিক ইস্যু নিয়ে এই পথ নাটকের আয়োজন করে থাকে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় চারণ কবি মুকুন্দ দাস এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কবি গান গাইতেন। কবি গানের মাঝে মাঝে দর্শকদের মতামত জেনে নিতেন। নাটকের ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের মতামত জেনে নেওয়ার এই পদ্ধতিকে ওচঞ (ওহঃবৎধপঃরাব ঢ়ড়ঢ়ঁষধৎ ঞযবধঃবৎ) বলে।
নেত্রকোণা সম্মিলিত যুব সমাজের কয়েকজন সদস্য মিলে ২০১০ সালে গড়ে তুলেছে একটি নাট্যদল। এর নাম দিয়েছে তারা “নাটাই নাট্যদল”। তখন তারা বিভিন্ন বিষয়ে মঞ্চ নাটক প্রদর্শন করতো। এই নাটাই নাট্যদলের সদস্যরা মিলে নাটক লেখা, পরিচালনা, নির্দেশনা ও অভিনয় করে থাকে। একটি বেসরকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ২০১৪ সাল থেকে তারা পথনাটকের সাথে যুক্ত হয়। সেই সংস্থা থেকে তারা মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক নাটক প্রদর্শন করেছিল নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকায়।
মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণার একটি মাধ্যম হিসেবে নাট্যদলের সদস্যরা পথ নাটককে বেছে নিয়েছেন। তারা ২০১৫ সাল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার উদ্যেশ্যে নাটক করে যাচ্ছে। নেত্রকোনা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে, বাজারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার ধারে তারা এই পথনাটক প্রদর্শন করছে। তাদের নাটকের বিষয়বস্তু হলো “নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ রক্ষা”।
উদ্যোক্তারা বলেন, “আমরা পথ নাটকের মাধ্যমে জ্বালানি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গ্রামের লোকজনের সচেতন করে তোলার চেষ্টা করি। সরকারি ও বেসরকারী সুবিধাসমূহ নিয়েও কথা বলি। সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখাই।”
এই সকল পথ নাটকের ফাঁকে ফাঁকে অভিনয় শিল্পীরা দর্শকের মতামত সংগ্রহ করেন। তাদের ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে পরবর্তীতে আরো ভালো করার চেষ্টা করেন। নাটকের কাহিনীর শিক্ষনীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। সম্মিলিত যুব সমাজের সদস্যরা এভাবেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও অপচয় রোধের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন গত দুই বছর ধরে যা এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।