ফসল রক্ষা বাঁধে রোপণকৃত গাছ অনেক উপকার করবে

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং
মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে, বারসিক’র সহযোগিতায় এবং উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনের ব্যবস্থাপনায় উচিতপুর বালই ব্রীজ থেকে ভূলুয়া ব্রীজ পর্যন্ত ২.৫ কি.মি. ফসল রক্ষা বাঁধে সম্ভাবনাময় উচিতপুর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে সম্প্রতি ৫০০টি পানি সহনশীল হিজল ও করচ বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ বৃক্ষ রোপণ অভিযানের শুভ উদ্বোধন করেন।


মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়ালীউল হাসানের নেতৃত্বে ও সঞ্চালনায় বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি উপলক্ষে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মদন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান, বারসিক’র সহযোগি সমন্বয়কারী শংকর ম্রং, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাসান, যুব প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, মদন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন প্রমূখ।
বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আলোচনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালীউল হাসান বলেন, ‘মাননীয় জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম এর সম্ভাবনাময় উচিতপুর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধে পানি সহনশীল বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই পরিকল্পনা অনুযায়ী মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজ ফসল রক্ষা বাঁধে বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পানি সহনশীল গাছের ৫০০টি চারা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন পরিবেশবাদী গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান বারসিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধে বনায়নের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছে উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠন। সংগঠনটি বৃক্ষ রোপণ থেকে শুরু করে সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার দায়িত্ব নিয়েছে। উপজেলা সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী সমিটি প্রয়োজনীয় সার দিয়ে এবং মদন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের কোন খরচ নেই। উপজেলা প্রশাসন শুধুমাত্র উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বারসিক প্রতিনিধি শংকর ম্রং বলেন, ‘উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনটি ২০১৯ সালে বারসিক’র নিকট বাঁধটিতে বনায়নের আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাঁধটিতে পুনরায় মাটি কাটা হবে বলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড পুনরায় মাটি কেটে বাঁধটি উঁচু করায় তা বনায়নের উপযোগি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাঁধটিতে বনায়নের ইচ্ছা ব্যক্ত করে পানি সহনশীল গাছের চারা সহযোগিতা কামনা করলে বারসিক’র পক্ষ থেকে ৫০০টি চারা দিতে সম্মত হই এবং উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনের যুক্ত হবার ইচ্ছার কথা জানাই।’ সংগঠনটির স্বেচ্ছাশ্রমে ব্যবস্থানার দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছাটিকে তিনি স্বাগত জানান। এভাবে উপজেলা প্রশাসন, বারসিক ও উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজকের এ বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ। তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্যোগটি সাফল্য পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে বারসিক ও উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক তত্ত¡াবধানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ‘গাছের চরাগুলো বড় হলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উচিতপুরের সৌন্দর্য্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি কৃষকরা মাঠে কাজ করতে এসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারবেন। পাখির আশ্রয় সৃষ্টি হবে এবং পাখি মাঠের পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করবে।’ তিনি চারাগুলোকে রোদ থেকে রক্ষায় সংগঠনের সকল সদস্যদেরকে বৃক্ষ রোপণের পর অন্তত ৭-১০দিন পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়মিত পানি সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেন।


উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনের প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান উপজেলা প্রশাসন ও বারসিককে ফসল রক্ষা বাঁধে বৃক্ষ রোপণে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘ফসল রক্ষা বাঁধে রোপণকৃত গাছ বড় হলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবেন। তারা মাঠে কাজ করতে এসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারবেন, পাখি বসে মাঠের পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করবে, পর্যটকরা বাঁধে ঘুরে বেড়াতে পারবে এবং বাঁধটি সুরক্ষিত হবে।’ তিনি সফলভাবে চারা রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে সকল ধরণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে তার সংগঠন সর্বদা নিয়োজিত থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন।
উপজেল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব হাবিবুর রহমান মুজিবর্ষ উপলক্ষ্যে উচিতপুর সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকল্পে ফসল রক্ষা বাঁধে বৃক্ষ রোপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন, বারসিক ও উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিসহ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।


প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা মোজস্ট্রেট জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন,“মুজিবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ নিয়েছেন। সারা বছর ব্যাপী এসব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। সরকারের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাধারণ নাগরিকদেরকেও সরকারের সাথে থেকে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।” তিনি আরও বলেন,“মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় সম্ভাবনাময় উচিতপুর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধণে যে পরিকল্পনা করেছিলেন আজ বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে তার শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সরকারী কর্মকর্তাগণ হয়তো স্থায়ীভাবে মদনে থাকবেননা, কিন্তু আপনারা এলাকাবাসী এখানেই থাকবেন। এই সৌন্দর্য আপনারাই উপভোগ করবেন। তাই এ বৃক্ষগুলো ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা আপনাদেরকেই করতে হবে।” তিনি মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ফসল রক্ষা বাঁধে বৃক্ষ রোপন কর্মসচির সফলতা কামনা করেন।


আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ একটি হিজল গাছের চারা রোপন করে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির পর বৃক্ষ রোপন করেন যথাক্রমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব হাবিবুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাব নাজমূল হাসান। উদ্বোধন শেষে উচিতপুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠনের সদস্যরা বাঁধে হিজল ও করচ গাছের চারা রোপন কার্যক্রম আরম্ভ করে।

happy wheels 2

Comments