বৈচিত্র্য সুরক্ষায় গ্রামীণ নারীর অবদান
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার
গাছ পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় এক অনন্য প্রাকৃতিক উপাদান। এটি শুধুমাত্র পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করেনা সেইসাথে মানব সমাজের নিত্যদিনের প্রয়োজন ও নিরাপত্তায় গাছের অবদান ব্যাপক। পৃথিবীর সকল প্রাণসত্ত্বার যে খাদ্যচক্র তাকে টিকিয়ে রেখেছে গাছ। এই উপলব্ধিকে স্বীকার করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় বারসিক সিংগাইর রিসোর্স সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে নগর ও গ্রাম পর্যায়ে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় দেশীয় গাছের চারা বিতরণ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকবছর ধরে সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম যেমন: আজিমপুর, ঘোনাপাড়া, বিনোদপুর, বাইমাইল, আঙ্গারিয়া, শিবপুর, বকচর গ্রামসহ বেশকিছু গ্রামের নারীদের মাঝে দেশীয় আমড়া, জাম, কাঠালঁ, পেয়ারা, লেবু, ডালিম, বেল, আমলকি, অর্জুন জলপাইসহ বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষুধি গাছের চারা বিতরণ করা হয় যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
উক্ত গ্রামগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এইসব গ্রামের নারীরা পরম মমতাভরা যতœ দিয়ে সেই গাছগুলো টিকিয়ে রেখেছেন। গ্রামীণ নারীদের সাথে আলেচনায় জানা যায়, বিতরণকৃত ফলজ গাছ যেমন: পেয়ারা, ডালিম, লেবু প্রভৃতি গাছে ইতোমধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে। ঘোনাপাড়া গ্রামের উষা রানীর কাছ থেকে জানা যায়, এই গাছগুলো মুলত নারীদের সম্পদ। এই গাছ থেকে যেমন বিভিন্ন সময়ে লাকড়ি (জ¦ালানি) সংগ্রহ করা যায় তেমনি বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফলও পাওয়া যায়। এই ফলগুলো পরিবারের অন্যতম পুষ্টির উৎস। নারীরা তো আর বাজারে যেতে পারে না যে বাজার থেকে ফল কিনে আনবেন, আর বাজারের ফলগুলো তো বিষে ভরপুর। নিজের হাতের গাছের ফল তো বেশি পুষ্টিকর, এতে পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
গাছের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আলীনগর গ্রমের ফুলজান বেগম বলেন, ‘এই গাছগুলো শুধু মানুষকেই খাবার দেয় না; পশুপাখি ওরাও কিন্তু এগুলো খেতে পারে। মানুষ, পশু-পাখি চারপাশের সবকিছু নিয়েই চলতে হয় যা আমাদের কৃষিকাজের সাথেও জড়িত। গাছ যে আমাদের কতকিছু দেয় তা বলে শেষ করা যাবে না। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা নারীরা বাড়ির চারপাশে এবং পতিত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাই এবং সেইগাছগুলো সেবাযতœ দিয়ে বড় করি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার আশায়।’
তিনবছর আগে বিতরণকৃত গাছের অবস্থা আর গাছ রক্ষায় গ্রামীণ নারীদের আলোচনা থেকে বুঝা যায় কতটা মমতা দিয়ে গ্রামের এইসব নারী আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গাছকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, ‘গাছ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে যেমন সুরক্ষা দিচ্ছে তেমনি এলাকার প্রাণীকুলের আশ্রয় ও পুষ্টির অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে। গাছ আমাদের জীবনের অত্যন্ত উপকারি একটি উপাদান যা ফুলে-ফলে ভরিয়ে রেখেছে চারপাশ।’
গাছগুলো গ্রামীণ নারীর খুব আপন সম্পদ। গাছগুলোকে তারা তাদের সন্তানের মতোই পরম ভালোবাসায় আগলে রাখছেন। গাছ সুরক্ষায় গ্রামীণ নারীর মমতাভরা উদ্যোগ চিন্তা বাস্তবায়নের ভেতর দিয়েই সুরক্ষিত হোক আমাদের চাপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ। পরম মমতা নিয়ে গাছগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গ্রামীণ নারীদের রইল অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এভাবেই তারা বৈচিত্র্য সুরক্ষায় অবদান রাখুক ।