আমরাও সুপেয় পানি চাই
রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার
মুন্ডুমালা পৌরসভা মাহালী পাড়ায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ৫০ ঘর মাহালীদের একটা নিজস্ব দুঃখ আছে! এই মানুষের সবাই সেই দুঃখ বয়ে বেড়ান। তাদের জন্য নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা। তারা প্রথমে নলকূপ ব্যবহার করতো পানির জন্য, যার ভূপৃষ্ঠের পানির লিয়ার ছিল আশি ফুট। তবে ২০১৮ সালে সেটি নষ্ট হয়। এই গ্রামের মানুষেরা নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৯ সালে নিজ অর্থায়নে একটি মিনি মোটর বসান। । সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করত এই ৫০টি পরিবার। তবে তুলনামূলক পানি খুব কম উঠতো। এক সময় সেই মিনি মোটরটিও নষ্ট হয়ে যায়।
গ্রামের মানুষেরা ২০২০ সালে আবারো নিজ অর্থায়নে মিনি মোটর বসানোর সিদ্ধান্ত নেন । তখন ভূপৃষ্ঠের পানির লিয়ার ছিল ১৫০ ফুট । কোনভাবেই ১৩০ ফিটের উপর বোরিং করতে পারত না। একটি বৈদ্যুতিক পাম্প বসানোর চেষ্টা করলেও সে পাম্পে পানি ওঠেনা। পরপর দুইবার চেষ্টা করার পর সেখানে পানি উঠেনি।
গ্রামের মানুষেরা সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানের জন্য তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয়ভাবে খাওয়ার পানি কিনে আনছেন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে। মাসে এর জন্য ১২০-১৫০ টাকা দিতে হয় তাদের। গোসল-ধোয়ামোছার জন্য পুকুরই একমাত্র অবলম্বন। গৃহপালিত পশুদের খাওয়া-গোসল সব পুকুরেই করাতে হয় তাদেরকে। অন্যদিকে আগের মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পানিতেই সব কাজ হওয়ায় পানি দুষিত হয়ে ছড়াচ্ছে চর্মরোগ। বিশেষকরে গর্ভবতী এবং নবজাত শিশুদেরও ব্যবহার করতে হচ্ছে পুকুরের পানি। আবার আগের মতো সব পুকুরে যেতেও পারেন না তারা কারণ বেশিরভাগ পুকুরেই এখন হচ্ছে মাছচাষ। এই গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সমস্যাটা এখনও রয়ে্গেছে। তারা সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পাবারা প্রত্যাশা করেন।0
এই প্রসঙ্গে চিচিলিয়া হেমরম (৪০) বলেন, ‘আমার সন্তানের বয়স ৯ মাস। বাড়িতে আমি একাই। স্বামী সকালে উঠে কাজে চলে যায় । যেই স্থান থেকে পানি নিয়ে আসে। দিনে তিনবার নির্দিষ্ট সময়ে মোটর অন করা হয়। পরে গেলে পানি পাওয়া যায় না। আমার নয় মাসের বাচ্চার বাড়িতে রেখে যেতে পারে না। তাই তাকে নিয়েই পানি আনতে হয় আমার। খুব কষ্ট লাগে। সরকারের কাছে তাই আকুল আবেদন করি এই আমাদের এই সমস্যা সমাধানে যেন উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরাও সুপেয় পানি চাই। এটা আমাদের অধিকার।