বাবাজির পথেই আলোর সন্ধান
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসালাম
“বাবাজি (পিতা) একসময় সাপ খেলা, যাদুটোনা দেখিয়ে গাছ-গাছড়ার ছাল বাকর বিক্রি করে সংসার চালাতেন। জমির আইলে, বাঁশের ঝোপঝাড়ে, বনের মধ্যে থেকে বাবা বিভিন্ন ঔষধি গাছ তুলে এনে হাটে মজমা করে এবং গ্রামে ঘুরে ঘুরে এসব বিক্রি করতেন। দিনে দিনে সবকিছু শিখে ফেললাম। আমার চলার পথ এখন বাবাজিকে ঘিরেই, তার শেখা পথেই।” কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের শবসার সাকো পাড়া গ্রামের আব্দুল করিম কবিরাজ (৫৬)।
বারনই নদী পড়ে এক চিলোকোঠায় সরকারি খাস জায়গায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আব্দুল করিম। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বেশি সময় থেকে তিনি গাছ গাছালি, বনজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়ে যে আয় হয়, তাই দিয়ে সংসার চালান। একসময় অনেক বেশি আয় হতো। কিন্তু দিনে দিনে প্রাকৃতিক বন আর গাছের উৎস কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। এখন অনেক ধরনের গাছ বা শেকড় বানেতি দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় লাভ থাকে কম। তবুও ধরে আছেন এই বাবার এই পেশা। তিনি বলেন, “বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি অনেক বড়ো কবিরাজ হবো, তাই বাবার শেখা স্বপ্ন নিয়েই আজো পথে চলছি”।
নিজের বসবাসের কোন জায়গা নেই। ১৯৮০ সালে বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের পাশ থেকে বারনই নদী পাড়ে এসে বসতী গড়েন। সরকারি এই তিন কাঠার জায়গায় দুটো ঘরের পাশাপাশি তিনি আঙ্গিনায় একটি ঔষধি গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন। প্রয়োজনীয় ঔষধি গাছগুলো এখান থেকেও সংগ্রহ করে থাকেন। বাগান এবং বাড়ি ঘিরে তার এখন প্রায় একশত’র কাছাকিাছি ঔষধি গাছ রয়েছে। তিনি জানান, অনেক সময় এই জায়গার জন্যে অনেকে আবার সমস্যাও করেন। যখন হাজার হাজার বিঘা জমি অযথা পড়ে থাকে অথবা বেদখলে ভূমি দস্যুদের হাতে। তখন তিন কাঠার মতো একখন্ড জমিতে একটি সংসার এবং প্রকৃতির প্রায় শত উদ্ভীদপ্রাণ বেঁচে আছে আব্দুল করিমের প্রচেষ্টায়। সেটাই এই দেশের জন্যে গর্বের বিষয়। সেটাকে এই সময়ে সাধুবাদ জানানোই অনেক বেশি উপযোগী। কারণ আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এই রকম কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলোর জন্যেই। যারা শত সংকটের মধ্যেও নিজেকে টিকিয়ে রেখে আবার সমাজ এবং দেশের জন্যে উপকার করছেন।
আব্দুল করিমের আশা তিনি এমন একটি ঔষধি বাগান গড়ে তুলবেন, সেই বাগানে যেন সব ধরনের ঔষধি গাছ পাওয়া যায়। আব্দুল করিমের মতো গ্রামের প্রকৃতি প্রেমী, উদ্ভিদ প্রেমী মানুষগুলোর স্বপ্ন পূরণ করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পাবে সেটাই প্রত্যাশা।
পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। আবার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে বৃক্ষের অবদান অনেক। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনসহ অধিকহারে রাসায়নিক কীটনাশক এর ব্যবহারের ফলে যে হারে আমাদের দেশীয় বৃক্ষ, লতাপাতা বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে তাতে আব্দুল করিমের মতো মানুষগুলো আমাদের প্রকৃতিকে বাঁচাতে সহায়তা করবে।