সাম্প্রতিক পোস্ট

এখন আমার পছন্দের মর্যাদা দেয়

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

‘এখন আমার পছন্দের মর্যাদা দেয় আমার খুব ভালো লাগে’। হাসতে হাসতে কথাগুলো বলছিলেন জহুরা বেগম (৫০ বছর)। মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের দিয়ারা ভবানীপুর গ্রামে তার বাড়ি। স্বামী নূর হোসেন কাটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২ ছেলে নিয়ে সুখের সংসার তার। কিন্তু তার মনের গভীরে কোথাও একটা কষ্ট লুকিয়ে থাকতো সারাক্ষণ।

জহুরা বেগম বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে বিয়ে হয়ে স্বামীর সংসারে আসি। দু’টি ছেলে হয়। সংসারে কোনো অভাব নেই, যা কিছু লাগে স্বামী কিনে এনে দেয়। ভালো লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হতো যদি নিজের পছন্দমত কিনতে পারতাম। কিন্তু কোনোদিন মুখ ফুটে স্বামীকে কিছু বলিনি। কখনো জনাতেও চায়নি। ভালোই ছিলাম। কিন্তু কোথায় যেন একটা কষ্ট লুকিয়ে ছিল। কিসের কষ্ট বুঝতেও পারতাম না।’


তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেরা একটু বড় হলে গ্রামে ব্র্যাক স্কুল হয়। আমি সেই স্কুলে মাস্টারি শুরু করলাম। প্রায় ১২ বছর ব্র্যাক স্কুলে মাষ্টারী করেছি। ব্র্যাকের বিভিন্ন মিটিং এ যেতাম অনেক কিছু শিখাইত কিন্তু কোনোদিন স্বামীর সাথে সেসব বিষয় নিয়ে আলাচনা করতে পারতাম না। তিনি যা ভালো মনে করতেন তাই করতেন। কোনো বিষয়ে আমার মতামত জানতে চাইতেন না। আমি ভাবতাম খাওয়া-পরার কোনো সমস্যা নাই। আমাকেও কষ্ট করে কিনতে হয় না কোনো কিছু। এটাতো ভালোই। আমারও সেভাবেই অভ্যাস হয়ে যায়।

জহুরা বেগম বলেন, ‘প্রায় ৪/৫ বছর ধরে বারসিক আমাদের গ্রামে কাজ করছে। গ্রামের মহিলারা মিলে একটা সংগঠন করে। আমিও সেই সংগঠনের সদস্য হই। নিয়মিত মিটিং এ যাই। মিটিং এ গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারি। সংসারে মহিলারা কত কাজ করে। তাদের কাজের কোনো গুরুত্ব দেয়না কেউ। নিজেদের পছন্দমত জামা-কাপড় কেনা, সবজি কেনাও যে আমাগো অধিকার হতে পারে তা আগে জানতাম না। সংগঠনে এসে জানতে পারছি। আমাকে বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে দিত না। কিন্তু বারসিক’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি যাই। আমাকে বাধা দেয়না। আমার স্বামীকে বলেছি। আমরা সবাই মিলে একটা সংগঠন করছি। কোন অনুষ্ঠান করলে বলি। কি নিয়ে আলোচনা করলাম তাও এখন একটু একটু বলি শোনে। এখন আমার ইচ্ছেমত সবজি দিয়ে মাছ, তরকারি রান্না করি। আমার যা মন চায় তাই রান্না করি কোনো কিছু বলেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশেপাশের অনেক বউরা মেক্সি পরে। আমার খুব ভালো লাগে দেখে। আমারও মন চাইতো মেক্সি পরতে। কিন্তু কোনোদিন স্বামীকে বলতে পারিনি। একদিন আমার ননদের সাথে ঠাট্টা করেছিলাম মেক্সি পরা নিয়ে। তার কিছুদিন পর দেখি আমার ননদ আমার জন্য একটা মেক্সি বানিয়ে নিয়ে আসছে। আমি আমার স্বামীকে না জানিয়ে ভয়ে ভয়ে মেক্সিটা পরলাম। আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা। যখন করোনা শুরু হলো তারপরে। আমার স্বামী আমাকে কিছুই বললো না। উল্টা বললো ‘তোমাকে তো মেক্সিতে ভালোই লাগে।’ তোমার যদি মন চায় তাহলে এখন থেকে মেক্সিই পরো। সেই থেকে মেক্সি পরা শুরু। এখন আমার স্বামী আমাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যায় মেক্সির কাপড় কিনতে। সালোয়ার কামিজ ও বানাই দিসে। আমার খুব ভালো লাগে এখন। এখন আমি খুব খুশি। আমার পছন্দের গুরুত্ব দিছে।’

happy wheels 2

Comments