সংকোচ ভেঙ্গে চিকিৎসা সেবায় আজ তাঁরা সুস্থ

রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী

বাংলাদেশের নারীদের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীদের নীরক ঘাতক অসুখের অন্যতম নাম জরায়ু ও ব্রেষ্ট ক্যান্সার। এই ধরনের অসুখের উপসর্গ সম্পর্কে ধারণা না থাকা ও অসুখের ব্যাপ্তি দীর্ঘ সময় ধরে থাকার কারণে বর্তমানে প্রায় ত্রিশ ভাগ নারী এই রোগের বহন করে চলেছে। রোগ সম্পর্কে সহভাগিতা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করা, সামাজিক ভাবে হেয় হওয়া এবং সংকোচের কারণে এই রোগের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বেশিভাগ নারী এই রোগের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে শুরু করে।

19024557_10207007987598521_1654681731_o
উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন মুক্ত সোর্স থেকে এই রোগ সম্পর্কে জানা যায়। জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত, গ্যাস, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য অথবা হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেতে অস্বস্তি লাগা ইত্যাদি জরায়ূ ক্যান্সারের অনত্যতম লক্ষণ হতে পারে। আবার ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্রেষ্ট্রে চাকা দেখা দেওয়া,ব্রেষ্ট্রের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া, চামড়া কমলালেবুর খোসার মত মোটা হওয়া, স্তনের বোটা দেবে যাওয়া, স্তনের বোটা দিয়ে রক্ত বা পুজ পড়া এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।

বারসিক জরায়ূ ও ব্রেষ্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনামুলক স্বাস্থ্য শিক্ষার কাজ শুরু করে ২০১৬ সাল থেকে। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারীর সহায়তায় নারীদের সচেতনামূলক শিক্ষা প্রদান করে আসছে। প্রাথমিক অবস্থায় নারীরা এই রোগ সম্পর্কে নিজেরা সংকোচ বোধ করলেও এখন এই রোগ নিয়ে তারা নিজেরা আলোচনা করে বিশেষ করে এই রোগের আক্রান্ত নারীরা সংকোচ ভেঙে চিকিৎসা গ্রহণে উদ্যোগী হন।

DSC01120
বারসিক’র সহায়তায় ২০১৮ সালে বড়শীপাড়া গ্রামের কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারাবাহিক স্বাস্থ্য শিক্ষার আসরের পরবর্তী চারজন নারী প্রেমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের যাবার জন্য আগ্রহী হন। কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে তাদের জরায়ু পরিক্ষার জন্য ভায়া টেষ্ট করাতে নিয়ে যান এবং ব্রেষ্ট ক্যান্সার প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে যান। বড়শীপাড়া গ্রামের শেফালী, শরিফা, নাদিরা ও নুরজাহানের (সবার নামই ছদ্ম) পরীক্ষা পর জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত উপজেলার ডাক্তারের পরামর্শক্রমে দুইজনের ঔষধ লিখে দেন এবং বাকী দুই জনকে জরায়ু ও ব্রেষ্ট ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য রাজশাহী যোগাযোগ করতে বলেন।

নাদিরা ও নুরজাহান রাজশাহীতে পরীক্ষা করানোর পর নাদিরাকে জরায়ু ক্যান্সারের মাত্রা ছড়িয়ে পড়ার জন্য অপারেশনের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে নুরজাহানের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য নিয়মিত ঔষদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পরামর্শে নাদিরা পরের সপ্তাহের রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়ে জরায়ু অপারেশন করান এবং বাকীরা ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ চালিয়ে যান। পরবর্তীতে খোজ নিয়ে জানা যায়, নাদিরা অপারেশন পরবর্তী সুস্থ আছেন এবং বাকীরা নিয়মিত ঔষধ সেবনে সুস্থ হয়েছেন। তবে ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নুরজাহানের চিকিৎসা চলমান আছে। এই প্রসঙ্গে নাদিরা জানান, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে জরায়ু ও ব্রেষ্ট ক্যান্সার নিয়ে এই রকম খোলামেলা আলোচনা না হলে আমরা আসল রোগ সম্পর্কে জানতে পারতাম না। আমার চিকিৎসা আরো দেরি হয়ে যেত।’
কৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারজানা আক্তার বলেন, ‘জরায়ু ও বেষ্ট্র ক্যান্সার নিয়ে আগে এলাকার নারীরা কথা বলতে দ্বিধাবোধ করতো এখন তারা অনায়াসে কথা বলে। অনেকে প্রেতমলী হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের না জানিয়েও এখন গ্রামের মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে।’  প্রেতমলী হাসপাতালের সেবাগ্রহণকারী শরিফা বলেন, ‘আমাকে প্রেমতলী হাসপাতাল থেকে যে ঔষধ দিয়েছিল তা খেয়েই আমার ভালো হয়ে গেছে। আমাকে রাজশাহীতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আমি এখন সুস্থ আছি।’

DSC02628

নারীদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এই সেবা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বারসিক তার অন্যান্য কর্মএলাকা তানোর,পবা বিভিন্ন সংগঠনে আলোচনার মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি উপজেলায় জরায়ু ও ব্রেষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা বিনামুল্যে প্রদান করা হয়। প্রাথামিক অবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারীদের সহয়তায় নারী সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন হলেও বর্তমানে নারীরা নিজেরাই তাদের এই সমস্ত অসুখের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা উপজেলা থেকেই নিতে পারে। সংকোচ ভেঙ্গে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে উপযুক্ত সময়েই নারীরা নিরবঘাতি এই অসুখ থেকে মুক্ত থাকুক এই হোক সকলোর কামনা।

happy wheels 2

Comments