বৃষ্টি আক্তারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

 
মানিকগঞ্জ সিংগাইর  থেকে রিনা আক্তার
‘‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর ’’। নারীরা যদি যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে কোনভাবেই তাঁরা পিছিয়ে থাকবেন না। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও বিভিন্নভাবে সফলতা অর্জন করছে এবং এগিয়ে যাচ্ছেন । বর্তমান যুগে মেয়েদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে অনেক নারীই এগিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের রুঢ় বাস্তবতার স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রবল আত্মবিশ^াস নিয়ে অনেকেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। তেমনই একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী বৃষ্টি আক্তার। 

সিংগাইর পৌরসভাধীন সরকারি অনুমোদিত ভূমিহীন মানুষদের জন্য গড়ে তোলা গোলড়া আশ্রায়ন প্রকল্পের ছোট্ট একটা ঘরে স¦ামী, এক কন্যাসন্তান, ননদ, শ^শুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে সংসার বৃষ্টি আক্তারের (২৩)।  তাঁর স্বামীর নাম শাকিল হোসেন (২৮) পেশায় রিকশাচালক (ভাড়ায় চালিত) আর মেয়ের বয়স মাত্র ২ বছর। শ^শুর মুদি দোকানী ছিলেন বর্তমানে রোগাক্রান্ত, শ^াশুড়ি গৃহকর্মীর কাজ করেন। বৃষ্টির বাবার বাড়ি সিংগাইর পৌরসভার কাংশা গ্রামে। সংসারের নিদারুন অভাবের কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বাবা তাকে গোলড়া আশ্রায়ন প্রকল্পে এক রিকশাচালকের সাথে বিয়ে দেন, সেখানেও দারিদ্র পিছু ছাড়েনি তার । 

পরিবারের খরচ চালানোর একমাত্র সম্বল ছিল মুদিদোকান ও স্বামীর রিকশা। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে আশ্রায়নের সামনে থাকা মুদি দোকানটি বন্ধ হয়ে যায় আর রিকশা চালিয়ে আর কতই বা ইনকাম হয়। আর তখন সব কাজই বন্ধ ছিল। তখন তাদের সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়্।ে সরকারি কিছু সাহায্য পেলেও এত লোকের ভরণপোষণ চালানো সত্যিই অসম্ভব হয়ে উঠে।  উপরোন্তু  বিয়ের ২ বছরের মাথায় কিশোরী বৃষ্টি মা হন। একদিকে সংসারের এই অবস্থা অন্যদিকে তার ছোট মেয়ের খরচ জোগানো, অভিশাপ যেন আরো জেঁকে বসেছে। 
  
কিন্তু দৃঢ়চেতা নারী বৃষ্টি ভাবেন এমন অবস্থায় হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে না; কিছু না কিছু করতেই হবে। তখন তিনি ভাবেন আমরা যদি আবার আমাদের মুদি দোকানটি ঠিক করে মালামাল বিক্রি শুরু করে দেয় তাহলে পরিবারের খরচ কিছুটা লাঘব হবে। এই সিদ্ধান্তে পরিবারের বাকি সদস্যরা রাজি না থাকলেও তার স্বামী তাকে কাজটি করতে উৎসাহ দেন। তখন তিনি স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠান থেকে দশ হাজার টাকার ঋণ নেন। সেই টাকা দিয়ে তাদের ঘরের সামনে ৩ টা টিন দিয়ে চালা আর চারপাশের বেড়া ও কাঠের তক্তা দিয়ে তাক বানান। পরে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কিছু মুদি মালামাল (বাচ্চাদের জন্য চিপস, চকলেট, বিস্কুট, বিভিন্ন প্রকার ডাল, চাপাতি, আটা, তেল প্রভৃতি) ক্রয় করেন। 
এই আত্মবিশ^াসের সাথেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু করে বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম। হারিয়ে যাওয়া সেই পুরোনো দোকানটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বৃষ্টিই মুদি দোকানে দোকানী হিসেবে বিক্রি শুরু করেন। 

এই বিষয়ে বৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে একদিন দুইদিন পরপর মুদি মালামাল কিনে আনতে হয়। খরচ হয় প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন আমার দোকানে বিক্রি হয় ১২শ’  টাকার মতো। লাভ থাকে ২০০-২৫০ টাকা, মাস শেষে প্রায় ৬ হাজার টাকার মতো  ইনকাম হয় আমার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি হাতগুটিয়ে বসে থাকতাম তাহলে আমার এই আয়টা হতো না। আগের চাইতে এখন অনেক ভালো আছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি ঘরে বসেই ব্যবসা করতে পারছি, আয় করতে পারছি। এখন  পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি মেয়ের জন্য কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছ্।ি’ 
অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে একজন সফল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে বৃষ্টি আক্তার। তাঁর এমন্্ উদ্যোগ নারীদেরকে স্বাবলম্বী করে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। 

happy wheels 2

Comments