একটি সম্ভাবনাময় কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখনকেন্দ্র
মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে শিমুল বিশ্বাস
সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনার ছোঁয়া পেলে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কাস্তা গ্রামের কৃষক স্বপন রায়ের বাড়িটি হতে পারে একটি আদর্শ কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখনকেন্দ্র।
স্বপন রায় (৪৮) । পেশায় একজন কৃষক। একটি ছেলে সন্তান এবং স্বামী ও স্ত্রী মিলে ৩ সদস্যর ছোট্ট একটি স্বচ্ছল পরিবার। একজন আদর্শ কৃষক এবং মানুষ হিসাবে এলাকায় পরিচিত এবং সমাদৃত। আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। কৃষক স্বপন রায়ের রয়েছে ৩০ শতাংশের একটি বসতভিটা। বাড়ির উঠানে কাস্তা বারোওয়ারী কৃষক কৃষাণি সংগঠনের নিয়মিত মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রয়েছে চাষযোগ্য কৃষিজমি। বছরের বারোমাস বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের মাধ্যমে পারিবারিক স্বচ্ছলতা ধরে রেখেছেন কৃষক স্বপন রায়। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় পরিচালিত হচ্ছে গরুর খামার। বাড়ি সংলগ্ন একখন্ড পালানি জমিতে তিনি সুপরিকল্পিতভাবে চাষ করছেন ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লালশাক, শশা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ঢেড়শ, পালংশাক, ঘাস, ভুট্টা সহ বৈচিত্র্যময় ফসল। বাড়ির উপর মাচা তৈরি করে চাষ করছেন লাউ, সীম, পুইশাক। বাড়ি সংলগ্ন ২০ শতাংশের পুকুরে চাষ করছেন দেশী জাতের বৈচিত্র্যময় মাছ। বাড়ির উপর বৈচিত্র্যময় ফলজ, বনজ এবং ঔষধি গাছে সমৃদ্ধ। বলতে গেলে তিনি তার পুরো বাড়িটিকেই একটি আদর্শ কৃষিবাড়ির আদলে গড়ে তুলেছেন।
২০১৮ সালে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়তাপুষ্ট কাস্তা বারোওয়ারী কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সাথে নিয়মিত সদস্য হিসাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন কৃষক স্বপন । সংগঠনের সদস্য হিসাবে সম্পৃক্ত হওয়ার পর বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পারস্পারিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে অংশগ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব স্থায়িত্বশীল, প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। এরপর থেকেই কৃষি বিষয়ক চিন্তা ভাবনা ও চর্চার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটতে থাকে কৃষক স্বপন রায়ের। একসময় কৃষির যাবতীয় উপকরণ বাজার থেকে কিনে আনলেও বর্তমানে তিনি কৃষি অধিকাংশ উপকরণ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি বাড়িতে স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ, গরুর গোবর প্রক্রিয়াজাত করে সার হিসাবে ব্যবহার, পোকাদমনের জন্য জৈব বালাইনাশক, আইপিএম (সেক্স ফেরামন ফাঁদ), জমির আইলে গাদাফুল রোপণসহ লোকায়ত পন্থা তার কৃষি ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করেছেন।
অন্যদিকে পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রেও চিন্তার পরিবর্তন এসেছে তাঁর। বর্তমানে তিনি পুকুরে স্থানীয় জাতের নানা প্রজাতির মাছ সম্পৃক্ত করেছেন। বাড়িতে একটি স্যালো মেশিন বসানো আছে। তবে তা ব্যবহার কমিয়ে শুস্ক মৌসুমে পালানি জমির ফসল চাষে পুকুরের পানি ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তিনি। তাছাড়া পুকুরের পানিতে হাস চাষ করার সুযোগ রয়েছে। বাড়ির উপর রয়েছে দেশী মুরগি পালনের সুব্যবস্থা। মূলকথা হলো কৃষক স্বপন রায়ের প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর কৃষি ব্যবস্থার উপর জ্ঞান ও দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছ আস্থা ও ভালোবাসা। তাই একটু সুপরিকল্পিত সহযোগিতার মাধ্যমে যেমন-ভার্মি কম্পোস্টের সেড, মুরগির বাচ্চা ফুটানোর হাজল, আবর্জনা ও রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ প্ল্ট, কবুতর পালনের সেড এবং প্রতিটি বিষয় সনাক্তকরণ সাইনবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে পারলে এ বাড়িটি হবে আদর্শ এগ্রোইকোলজি শিখন কেন্দ্র যা ভবিষ্যতে উক্ত এলাকায় প্রতিবেশীয় কৃষি সম্প্রসারণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।