‘বৈচিত্র্য কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে’- প্রফেসর ড. এম এ রহিম
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
বারসিক’র উদ্যোগে গতকাল ‘কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব’ বিষয়ক এক অনলাইন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কর্মশালায় নেত্রকোণা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার যুব সংগঠনের সদস্য, বারসিক’র বিভিন্ন কর্মএলাকার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। নেত্রকোণা অঞ্চলের সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান স্বাগত আলোচনার মাধ্যমে কর্মশালাটি শুরু করেন। এরপর এই কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন বারসিক’র পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গাছের সংগ্রহশালা, এশ্য়িার বৃহত্তম গাছের জীবন্ত যাদুঘর বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক উদ্ভিদতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম এ রহিম। প্রধান আলোচক ড. এম এ রহিম বলেন, ‘পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গাছের সংগ্রহশালা আমরা তৈরি করেছি। বারোমাস এখানে নানান জাতের ফল উৎপাদন হয়। শত শত জাতের ফলের গাছ সারাবছরই ফল দিচ্ছে। আমরা এই গাছ মানুষের কাছে পৌছে দিতে চাই। আমরা তো মানুষের জন্য কাজ করি। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার তত্ত্বাবধানে এই জার্মপ্লাজম সেন্টারে প্রায় ১১হাজার জাতের ফলজ গাছ আছে।’
বৈচিত্র্য’র প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশের জনসংখ্যা যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই বর্ধিত জনসংখ্যার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বৈচিত্র্য দরকার। আমাদের দেশের কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। কেউ অতিরিক্ত খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে আবার কেউ পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে। একজন মানুষের প্রতিদিন ৪শ’ গ্রাম ফল ও সব্জী খাওয়া প্রয়োজন। সেখানে আমরা মাত্র ২২০ গ্রাম করে খাই। এতে করে আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব থেকেই যাচ্ছে। দেশিয় বিভিন্ন জাতের ফল আমাদের সেই অভাব পূরণ করতে পারে।’
ড. এম এ রহিম বলেন, ‘আমাদের এই জার্মপ্লাজম সেন্টারে সাড়ে ৩শ’ জাতের আম গাছ আছে। কোনোটি আছে বীজ ছাড়া, কোনোটি আবার খুব রসালো। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও আমের জাত আছে। লবণাক্ত এলাকায় খাপ খাইয়ে টিকে থাকার মতো আম গাছও আছে। এগুলোর একটা বীজ থেকে ৭/৮টি পর্যন্ত চারা তৈরী করা যায়।’ এরপর তিনি বিভিন্ন আম এর জাত সম্পর্কে বর্ণনা করেন। যেমন চৌফলা, হুয়ালাক, চুয়া, আরোমানিস, মার্ডি, তাইওয়ান ইত্যাদি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈচিত্র্য কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে। অনেকেই বিভিন্ন ধরণের ফসল বিক্রি করে ভালো উপার্জন করছে। শশার চেয়ে গাজরে পুষ্টি উপাদান বেশি। তাই এখন গাজর চাষ ও বিক্রি বেশি হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ফসল আবাদ করলে একদিকে যেমন খাদ্য,পুষ্টি, অর্থ নিশ্চিত হয় অন্যদিকে অনেক গাছ থাকলে আমাদের বায়ুম-ল পরিচ্ছন্ন থাকবে। কার্বন নিঃসরণ কম হবে, বায়ু দূষণ কম হবে।’
উল্লেখ্য, এই কর্মশালার আলোচনা দুইটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্যায়ে চর্চাকারী কৃষক যারা নিজেদের গ্রামে বিভিন্ন উপায়ে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে একজন প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক। প্রথম পর্যায়ে কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ, আটপাড়া উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের সায়েদ আহাম্মদ খান বাচ্চু আলোচনা করেন।