ব্রজপাত থেকে সবাইকে রক্ষা করে খেজুর গাছ
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহিনুর রহমান
‘ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটিতে যাব’- এটি ছিল গ্রামীণ বাংলায় খেুজুর গাছকে কেন্দ্র করে খেজুর গাছিদের তৈরি করা বুলি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই খেজুর গাছ ও গাছিকে আর দেখা যায় না। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীন ইটের ভাটা তৈরি, অপিকল্পিতি বাড়ি ঘর নির্মাণ, কৃষি জমি হ্রাস, অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণের জন্য খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। তাই নানাবিধ কারণেই খেজুর গাছ ও গাছিদের সংকট দেখা দিয়েছে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং মানবকুলসহ প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
সম্পৃতি সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের নবগ্রামে জলবাযু পরিবর্তনজনিত ‘ঝুঁকি মোকাবেলায় জনগোষ্ঠীর করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও খেজুর বীজ বপন অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। বাংগালা, নবগ্রাম, কাস্তা কৃষক কৃষাণি সংগঠন যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি মো. করম আলী মাষ্টার, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রতন চদ্র মন্ডল, বাবুল চন্দ্র মন্ডল, বারসকি কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস, শারমিন আক্তার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কৃষক কৃষাণি এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আলোচনায় করম আলী মাষ্টার বলেন, ‘বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ একটু উচু ধরনের হওয়ায় সে নিজে বজ্রপাত গ্রহণ করে এবং মানুষসহ প্রাণিকূল রক্ষা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাখি হলো কৃষকের বন্ধু আর খেজুর ফল পাখির খুবই প্রিয় একটি খাবার। কৃষকের স্বার্থেই খেজুর গাছ ধরে রাখতে হবে যেন পাখিদের খাবারের বেঁচে থাকার উৎস নষ্ট না হয়।’ রতন চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে খেজুর বীজ রোপণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয়ে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর গাছ থাকলে এই দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খেজুর গাছ বাড়ি এবং রাস্তার শোভাবর্ধন করে থাকে।’ আলোচনা শেষে সকলের অংশগহণে এক কিলোমিটার রাস্তায় খেজুর বীজ বপন করা হয়।
কৃষাণী ভানু বেগম বলেন, ‘খেজুর গাছের অপ্রয়োজনীয় কিছু নাই; সবকিছুই কাজে লাগে। খেজুরের পাতা দিয়ে পাটি তৈরি হয়,পাখা তৈরি হয়, নারীরা কুটির শিল্পে খেজুরের পাতা ব্যবহার করেন। তাছাড়া খেুজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস, খির নিরাপদ খাবারের অন্যতম উৎস।’ বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘খেজুর গাছ ও রস বাঙালি সংষ্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান। খেজুরের রস ও খেজুর গাছের রয়েছে একটি আন্তঃনির্ভরশীল ও সামাজিক সম্পর্ক। খেজুর গাছকে কেন্দ্র করেই টিকে থাকতো কামার, কুমার, গাছি, কয়েকটি পেশাজীবী সম্প্রদায়। তাছাড়া খেজুর গাছ পাখির প্রিয় আবাস, পাখিরা এ গাছে বাসা বাঁধে ডিম পাড়ে এবং নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে মনে করে।’