করোনা পরবর্তী খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করণ ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষিকেই গুরুত্ব দিতে হবে
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
করোনা মহামারিতে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী লকডাউনে আছে। করোনার থাবায় বন্ধ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মিল কারখানা, শিল্পকারখানা, পোশাক শিল্প, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, অফিস আদালত। দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে কামার, কুমার, তাতী, জেলে, রাজমিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, রিক্সা চালক, ভ্যান চালকসহ বিভিন্ন পেশার নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে আসতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। সহসাই করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রনে না আসলে আগামী পৃথিবী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগবে। তাই জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে করোনা পরবর্তী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সকলের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেরও আগামিতে খাদ্য সংকটে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। অনেক উন্নত দেশ নিজেদের চাহিদা পূরনে সীমিত করতে পারে নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি। ফলে আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে খাদ্যঘাটতি দেখা যে দেবে না, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাহলে কিভাবে এই জনঘনত্বের দেশে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপরই এদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে দেশীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও খাদ্য সংকট নিরসনে কৃষিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাধীনতার পূর্বে ও পরবর্তী কালে সকল বন্যা, খরা, মহামারিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুতবপূর্ণ। একসময় সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। কিন্তুু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে- তার মূলে রয়েছে কৃষি ও কৃষক। এবারও করোনাকালীন খাদ্য সংকট নিরসনে এগিয়ে আসবে বাংলার কৃষি ও কৃষক। আর এই সংকট মোকাবেলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে দিতে হবে প্রয়োজনীয় সহায়তা। করোনা কালিন অবসর সময়গুলোতে যারা ছোট আকারে বসত বাড়ি বাগান,পতিত জমিতে কৃষি কাজে ব্যবহার করছেন তাদেরকে কৃষক হিসেবে সহায়তা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষককে উৎসাহিত করতে হবে যেন নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় ফসল, শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন করতে পারেন। তাই কৃষককে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রনোদনা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা জরুরি। সেই সাথে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষেও উৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ করে দেশের খাদ্যচাহিদা মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের দরকার হয় তা আসে কৃষিজমি থেকেই। কিন্তু দিন দিন এই জমি কমে যাচ্ছে। কৃষিজমির পরিমাণ এতটাই দ্রুত কমছে যে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে কৃষি জমি রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভপতি মো. রোস্তম আলী বলেন, “আদিকাল থেকে নানা দুর্যোগে কৃষি এবং কৃষক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। কিন্তুু কৃষি আমাদের অর্থনীতির বড় হাতিয়ার হলেও বরাবরই এ খাত চরম অবহেলার শিকার। দালাল ও মুনাফা ভোগী লোভী ব্যবসায়ী চক্রের দুষ্ট চক্রে দরিদ্র কৃষক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। বর্তমান যুগের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও এর খুব উন্নতি হয়নি। ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকের সামাজিক অবস্থা দিনকে দিন উন্নত হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হয়েছে। তাই এই সংকট মোকাবেলায় আগামি বাজেটে কৃষিখাতের বাজেট বৃদ্ধি করে সকল শ্রেণীর কৃষককে প্রনোদনা দিতে হবে।” সাধারণ সম্পাদক ইমান আলি বলেন, “সকল পেশার মানুষ লকডাউনে থাকলেও কৃষক বোঝেনা লকডাউন কি? শুধু কৃষকেরাই করোনাকে ভয় না করে নিজের মত করে করে যাচ্ছে কৃষি কাজ, ভূমিকা রাখছে দেশের খাদ্যনিরাপত্তায়। করোনাউত্তর পৃথিবী যে গভীর সংকটে নিপতিত হচ্ছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে তাই গুরুত্ব দিতে হবে কৃষিকে।”
এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। করোনা পরবর্তী খাদ্য সংকট নিরসন কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে কৃষকদের দাবীগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
- সরকার কর্তৃক কৃষিতে প্রণোদনা, সার ও বীজ সহায়তা কৃষিক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে দিতে হবে, যার সুফল সবাই পাবে।
- লটারি পদ্ধতি বাতিল করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ১০৪০টাকা মূল্যে ধান ক্রয় করতে হবে।
- নারী কৃষানীদের স্বীকৃতি দিতে হবে।
- করোনা পরবর্তী কৃষির ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষকদের মাঝে সহজ শর্তে প্রদত্ত ভর্তুকি নিশ্চিত করতে হবে।
- বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সহজ শর্তে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
- কৃষকের পেনশন ও শস্য বীমা চালু করতে হবে।
- নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে জৈব কৃষি প্রনোদনা দিতে হবে।