স্বল্প জায়গায় অধিক উৎপাদনে রেবা বেগমের উদ্যোগ
রাজশাহী থেকে অমিত সরকার
রাজশাহীর ভদ্রা এলাকায় রেল লাইনের ধার ঘেসে গড়ে উঠা জামালপুর বস্তিতে রেবা বেগমের বসবাস। ছোট্ট একটি ঘরে স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে এই জায়গায় তাদের ঠিকানা। সংসারের খরচ বাঁচাতে ও নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের উদ্যাগ নেন রেবা বেগম। খুবই স্বল্প জায়গা হওয়ায় বেশি সবজি গাছ গালানো যায় না বলে রেবা বেগম একটু জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের জন্য দোতলা পদ্ধতিতে সবজি চাষের উদ্যাগ নেন।
রেবা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী স্যালুনে কাজ করে ইনকাম করা টাকায় টানাটানির সংসার আমাদের। বাজারে সব কিছুর দাম অনেক বেশি। সবকিছু কিনে খাওয়ার মত ক্ষমতা নেই আমাদের। তাই ঘরের কোনে একটু জায়গার মধ্যে সবজি গাছ লাগাই। হইলে বাজার থেকে কিনতে হয় না। জায়গা কম তাই প্রথমে পুই শাক লাগিয়ে একটা ছোট মাচা করে দিয়ে তার উপর তুলে দিয়েছি। আর পুই শাকের মাচার উপর আরএকটি মাচা করে সেখানে লাউ গাছ তুলে দিয়েছি। যেহেতু পুই শাক হিসেবে খাওয়া যায় ফুল ও ফল এর দরকার হয়না তাই এই সবজিটা একটু ছায়া হলেও হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাউ এর ফুল ও ফল হয় তাই এই গাছের রোদ লাগতে হয় বলে এই গাছটি উপরে দিয়েছি। পুঁই শাক হয়েছে। এখন খেতে পারছি আর লাউ গাছে ফুল আসছে এখন। মাচার সাইড দিয়ে মরিচ গাছ লাগিয়েছি। ঘরের আরএক সাইডে করলা গাছ লাগানো আছে। ওটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। ওই গাছটি ঘরের চালায় তুলে দিবো। আর সাইড দিয়ে বেগুন গাছ লাগিয়ে দেওয়া আছে।’
রেবা বেগম বলেন, ‘আমি সারাবছর টুকটাক সবজি লাগাই। এইটুকু জায়গার মধ্যে যা সবজি হয় তা দিয়ে আমার পরিবারের খাওয়া হয়। মাঝে মধ্যে বেশি হইলে বিক্রিও করি। এতে আমার কিছু টাকাও আয় হয়। দোতলা মাচা দিয়ে সবজি চাষ এবছরই প্রথম করলাম। পুইশাক তো হয়েছে। এখন লাউ হইলে আমি একই জায়গায় দুই ধরনের সবজি পাবো।’
উল্লেখ্য, জলবায়ু সংকট ও নানা সমস্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্বাস্তু প্রান্তিক মানুষের বসবাস এই জামালপুর বস্তিতে। রেলের খুবই স্বল্প জায়গায় ছোট ছোট খুপরি ঘর করে বসবাসকৃত প্রান্তিক এই মানুষগুলোর নানা ধরনের সমস্যা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি জলবায়ু সংকটে তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ের সাথে সহযোগী হিসেবে বারসিক তাদের সাথে কাজ করছে। তাদের নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধকরণে বারসিক সহযোগী হিসেবে তাদের সাথে নানা উদ্যাগ বাস্তবায়ন করে চলেছে। রেবা বেগমের এই আধুনিক উদ্যাগ একটি উদাহরণ হতে পারে, যা নগরবস্তিগুলোর পাশাপাশি সকল জাগায় ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।