করোনায় বাঙ্গি ফলের দাম ভাল
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
আমারা শিক্ষা অর্জন করি প্রকৃতি থেকে। আমাদের কৃষি কাজে অভিজ্ঞতাই সফলতার মূল চাবি। কৃষক উৎপাদন করে বিভিন্ন ধরনের ফসল। খাদ্য ও পুষ্টিপুরনে সহায়ক হয়। মহামারী করোনার জন্য বাঙ্গি ফলের চাহিদা ভাল। তবে করোনার জন্য উৎপাদিত ফসলের সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় দুর-দুরান্তে বাঙ্গি ফল পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সচেতন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকের বাঙ্গি ফলের দাম বেশ ভাল। প্রতি বছরের ন্যায় এবছর হরিরামপুরের বাহিরচরে সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করে কৃষকেরা। বাজারে মাঠে আবাদকৃত বাঙ্গি ফলের বেশ চাহিদা। মহামারী করোনায় জন্য হাট বসছে না। ফলে কৃষকের উৎপাদিত সকল ধরনের ফসল বিক্রয় করতে পারছে না। তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বর্তমানে কৃষক বাজারে শাক-সবজি ও ফল বিক্রয় করতে পারছে না। তবে যে কৃষক মাঠে বাঙ্গি ফল ও বিভিন্ন ধরনের শাক-শবজি উৎপাদন করতে পারছে তারাই লাভবান হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে মাঠে ফসল বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিকভাবে সফল হচ্ছে। বারসিক প্রথম পর্যায়ে দেশীয় বাঙ্গি বীজ বিনিময় করে ও আবাদে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। কৃষকগণ বাঙ্গি চাষে লাভ দেখে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে জমিতে দেশীয় বাঙ্গি আবাদ বেড়েছে।
কৃষক মজনু মিয়া (৫৮) বলেন, “দেশে করোনা আইছে। কৃষকদের কষ্ট বাড়ছে; যারা দিন কাজ করে খায় তাদের কষ্ট বেশী। আর যে কৃষক বুঝে শুনে শাক-সবজি, মসলা ও বাঙ্গি ফল আবাদ করছে তারা ভাল আছে। বাহিরচর এলাকায় ১০ বছর ধরে রবি মৌসুমে সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করার কারণে মহামারী করোনায় আমরা ভাল আছি। বাঙ্গির জমিতে পিয়াজ, রসুন, ধানিয়া চাষ হয়। জমি থেকে পিয়াজ, রসুন, ধানিয়া উঠে যায়, বাঙ্গি ফল বিক্রয় করতে পারি।” তাছাড়াও তিলের জমিতে সাথি ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করা হয়। বাঙ্গি ফল বৈশাথ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত থাকে। একটি জমিতে তিনটি ফসল চাষ করে একের পর এক ফসল উঠায় কৃষকের লাভ হয় তিগুন। বেলে দো’আশ মাটিতে মিশ্র ফসল চাষাবাদে অনেক বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।
ইয়াসমিন বেগম (৪৫) বলেন, “বর্ষার পানিতে বাহিরচর চকে প্রতি বছর পলি পড়ে। পলি দো’আশ মাটিতে পিয়াজ, রসুনের সাথে বাঙ্গি চাষ ভাল হয়। বাঙ্গি ফসল চাষ করতে শুধুমাত্র জমি চাষ বাবদ খরচ হয়।” আবাদের সকল বীজ নারীরা সংরক্ষণ করেন। তেমনিভাবে নারীর হাতের বাঙ্গি বীজ থেকে ফসল আবাদ হয়। বাঙ্গি বীজ রাখার উপায় হলো পাকা বাঙ্গি খেয়ে বীজ ভিজা অবস্থায় কোন ধরনের ঘরের বেড়ায় হাত দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। বীজগুলো ১০ থেকে ১৫- ২০ দিনে শুকিয়ে যাবে। সে বীজগুলো কোন মুখ বন্ধ বয়মে রেখে দিতে হবে। ফাগুন মাসে বাঙ্গি বীজ বপন করলে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বাঙ্গি ফল পাওয়া যায়। বাঙ্গি নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার। বাহিরচর গ্রামের কৃষকগণ বলেন ৩০ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করে ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকদের উদ্যোগে মিশ্র ফসল আবাদ করে বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছেন। কৃষক পর্যায়ে পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ ও জৈব উপায়ে সাথি ফসল বাঙ্গি চাষে খরচ কম হওয়ায় আবাদ বেড়েছে। কৃষক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাটির ধরণ অনুযায়ী চাষাবাদ করে পরিবেশ সম্মত উদ্যোগ গ্রহণে একে অপরের সহায়তা করছে। কৃষকদের চাষকৃত বাঙ্গি বাজারে সরাসরি ক্রেতার নিকট বিক্রয় করতে পারায় ভাল দাম পেয়ে কৃষক খুশি হয়।