লোকায়ত পদ্ধতিতে টমেটো সংরক্ষণ
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
টমেটো একটি পচনশীল সবজি। তাই ফ্রিজে রাখা অথবা ফরমালিন বা কোন ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করে ৫-৭ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা একেবারেই অসম্ভব। তাই পচনশীল পণ্য বেশিদিন সংরক্ষণের জন্য কোন না পদ্ধতি অবশ্যই অবলম্বন করতে হয়। বাণিজ্যিকভাবে যেসব কৃষক টমেটো চাষ করেন তাদের কাছ থেকে পাইকাররা টমেটো ক্রয় করে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেন। এরপর বড় ব্যবসায়ীরা মৌসুমী টমেটো হিমাগারে বা অন্য কোন উন্নত পদ্ধতিতে দীর্ঘ দিনের জন্য সংরক্ষণ ও বাজারে সরবরাহ করে বছরব্যাপী ভোক্তার চাহিদা পূরণ করে থাকেন। কিন্তু প্রান্তিক কৃষক যিনি উৎপাদন করেন তার কাছে ফসল সংরক্ষণের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি ছাড়া অন্যান্য বৃহৎ আকারের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগ কম। তাই নিজস্ব জ্ঞান ব্যবহার করেই নিজের উৎপাদিত টমেটো ক্ষুদ্র পরিসরে সংরক্ষণ করছেন কৃষাণী রমিজা বেগম (৩৮)।
কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চান্দুয়াইল গ্রামের কৃষাণী রমিজা বেগমের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ঘরের ধরনার (ঘরের শিলিং) উপর সারি সারিভাবে ঝুলছে লাল টুকটুকে টমেটো। যা মৌসুম শেষে তাদের পারিবারিক খাদ্য চাহিদা পূরণ করবে। বিগত ফাল্গুন মাস থেকে তিনি টমেটোগুলো ঝুলিয়ে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছেন কোন ধরনের ফরমালিন বা ঔষধ ছাড়াই। এখন পর্যন্ত এতে পচন ধরেনি বা কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি। বরং যতই দিন যাচ্ছে তা পরিপক্ক হয়ে আরো গাঢ় লাল রঙ ধারণ করছে।
রমিজা আক্তার ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম মিলে ৪৮ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তাদের উৎপাদিত টমেটোর মৌসুম শেষ হয়েছে ফাল্গুন মাসে। তারা প্রায় ৮০০ মণ টমেটো বিক্রয় করেছেন কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা দরে। শেষের দিকে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রয় না করে নিজের খাবার জন্য নিজস্ব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করছেন। এটা তার সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতি। তিনি বলেন, “এর জন্য প্রথমে টমেটোগুলা ডেটাসহ (ডালসহ) কাটতে হয়। তারপর সুতলী দিয় বাইন্দা (বেঁধে দেওয়া) ধরণাই ঝুলাইয়া দিলেই হয়। এইভাবে প্রায় ৩-৪ মাস পর্যন্ত রাখা যায়।” তিনি আরও বলেন, “এইভাবে কয়েকমাস পর্যন্ত নিজেদের খাওয়া চলে। যতদিন এই টমেটো থাকবো ততদিন বাজার থেইকা টমেটো কিনতে অইবোনা। এইরকমভাবে টমেটো রাখতে কোন খরচ লাগেনা। খুব বেশি পরিশ্রমও করা লাগেনা। ঘরের ভেতরের কোন জায়গাও দখল হয়না। কারণ ঘরের ধরণাগুলো সবারই খালিই থাকে।”
ঝুলানো এই পদ্ধতিতে তিনি বীজের জন্য যেগুলো সংরক্ষণ করেন তা কেটে চার ভাগ করে রৌদ্রে শুকিয়ে নেন। এরপর ভাদ্র মাসে প্যাকেটে বা মাটিতে চারা করেন। কার্তিক মাসে চারা জমিতে নিয়ে রোপণ করেন। তবে প্রতিবছর চারা করা নিয়ে দ্বিধাদন্দ্বে ভোগেন। কারণ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে যতটুকু জমি দরকার সেই পরিমাণ জমি তাদের নেই। যখন জমি লিজ পান তখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন।
গ্রামাঞ্চলের যে কোনো টমেটো উৎপাদনকারী কৃষক/কৃষাণী চাইলে এই পদ্ধতিতে টমেটো সংরক্ষণ করে উপকৃত হতে পারেন। বিশেষভাবে যাদের ফ্রীজ ব্যবহার করার সুযোগ কম বা নেই, বাজার থেকে দূরবর্তী অবস্থানে যারা বসবাস করেন, অথবা মৌসুম ছাড়া যাদের টমেটো পাওয়ার সুযোগ কম তারা এই ঝুলানো পদ্ধতিতে কয়েক মাসের জন্য টমেটো সংরক্ষণের মাধ্যমে পারিবারিক খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারেন খুব সহজেই।