দশ গ্রামের মানুষের নিরাপদ পানি খাওয়াতে ফিল্টার উপহার
দেবহাটা, সাতক্ষীরা থেকে মীর খায়রুল আলম:
তীব্র গরম বাড়ার সাথে সাথে উপকুল অঞ্চলগুলোতে খাওয়ার পানি ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এতে ভোগান্তির শেষ থাকেনা এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের। অধিকাংশ সময় খাওয়ার পানির সন্ধানে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। পানির উৎস থাকলেও অধিকাংশ এলাকাতে পানযোগ্য পানির সল্পতা বহুল অংশে দেখা দেয়।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কৈখালি, রাঙ্গাশিশা, আটশতবিঘা, নোড়া-চারকুনি, জোয়ার গুচ্ছগ্রাম, জেলিয়াপাড়া, খেজুরবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এই তীব্রতা। তাছাড়া উপজেলা সদরের কয়েক কিলোমিটার পরেও ইছামতির তীর ঘেষে বসন্তপুর, নাংলা, ছুটিপুর, ঘোনাপাড়া, টাউনশ্রীপুর, দাদপুর, চরশ্রীপুর, ভাতশালা ও গোপাখালীর কিছু অংশ জুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব রয়েছে।
এসব এলাকায় গভীর নলকুপের সংখ্যা একেবারে কম। দু’একটা খাকলেও পানি ওঠে না। দীর্ঘদিন আগে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ এর উদ্যোগে কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি ও সুপেয় পানির প্রকল্প স্থাপন করা হয়। বহু চেষ্টা করেও কোন গভীর নলকুপ বসানো সম্ভব হয়নি এ পর্যন্ত। কেউ কেউ পারিবারিক কাজের জন্য যে নলকুপগুলো বসালেও তার পানি পানের অনুপোযোগী। তাতে পাওয়া যায় আর্সেনিক ও আয়রনের মত বিষাক্ত পদার্থ। সাধারণত বাড়ির কাজে ব্যবহার করা ছাড়া পান করা যায় না এসব টিউওয়েল থেকে। এই পানির ব্যবহারে দেখা যায় থালা, বাটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রে লালচে দাগ যেটি আয়রন নামে পরিচিত।
সে কারণেই এ অঞ্চলের গ্রামের মানুষের বিশুদ্ধ পানি খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য একটি মাত্র পুকুর থেকে পানি পরিশোধন করে পান করা হয়ে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত এই ফিল্টারটির নামমাত্র দায়িত্বভার এপর্যন্ত অনেকেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সেবার পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে দিয়েছেন অকল্পনীয় দুর্ভোগ ভোগান্তি। অধিকাংশ ফিলটারগুলোর ২টি ট্যাবে কয়েক হাজার মানুষের জন্য তা যথেষ্ট নয়। গ্রামবাসীরও এমন আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদে নতুন ফিল্টার স্থাপনের দাবি জানালেও দীর্ঘদিনে নতুন ফিল্টার স্থাপন করা হয়নি। যেগুলো আছে তার অধিকাংশ বর্তমানে অকেজো অবস্থায় আছে। অন্যদিকে সচল ফিল্টারগুলোর বেহালদশা। ২টি ট্যাব থাকা সত্তেও অনেক স্থানে ১টি নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। তাই ১টি ট্যাবের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় এলাকাবাসীর।
চলতি বছরে জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা’র কাছে জানানো হয়। তিনি ১০-১২ গ্রামের মানুষের নিরাপদ পানি খাওয়াতে ব্যক্তিগত অর্থায়নে এ ফিল্টার উপহার দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ-আল-আসাদ জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, দেবহাটা প্রেক্লাবের সভাপতি আব্দুল ওহাব, উপজেলা জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বাবলু প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, টাউনশ্রীপুরস্থ জেলা পরিষদের পুকুরের পাড়ে ২০০৬ সালে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ পানি শোধনের একটি পানির ফিল্টার স্থাপন করে। পরে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ অভাবে এলাকার মানুষের খাওয়ার পানির সংকট দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌসকে জানানো হলে তিনি একটি নতুন ফিল্টার তৈরী করে দেন। এলাকাবাসী নতুন ফিল্টার স্থাপন করে দেওয়ায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এসময় তিনি অকেজ ফিল্টরটি পুনরায় সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।