সাম্প্রতিক পোস্ট

সুপেয় পানি চায় জয়াখালীর মানুষ

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিধান মধু ও রামকৃষ্ণ জোয়ারদার

“সরাসরি পুকুরের পানি খাই। ছেলেপেলে ও বাড়ির পরিবারের সবাই এটা খায়। বাড়িতে ৮ সদস্যের ভরণপোষণ নিয়ে সমস্যা। তাই অর্থের অভাবে ফিল্টারও কিনতে পারি না।” সরাসরি একটি পুকুর থেকে খাবার পানির কলসি ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে যেতে কথাগুলো বলছিলেন শ্যামনগর থানার জয়াখালী গ্রামের শফিকুল ইসলাম। তার সাথে কথা বলে জানা যায় দীর্ঘদিন যাবৎ এ গ্রামের মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছে। গ্রামের চারিদিকে পানি আর পানি। তবুও এ এলাকায় খাবার পানির সংকটের অতীত ইতিহাস থাকলেও দিনকে দিন এটি প্রকট আকার ধারণ করছে।

2-2
এই গ্রামের অদিবাসীরা পানি আগুনে ফুটিয়ে পান করে না। এমনকি পানি বিশুদ্ধ বা পরিস্কার করার অন্য কোন উপায় (যেমন-পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট) সম্পর্কেও তেমন জানে না। আর জানলেও কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হয় বা কিনতে হয় তাও জানে না। একই গ্রামের আবুল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, জয়াখালী গ্রামে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ পরিবার রয়েছে। প্রায় পরিবারই সরাসরি কোন না কোন পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করে। তারা স্বীকার করেন যে, সরাসরি পুকুরের পানি খেয়ে অনেক সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ এর সম্মূখীন হচ্ছে।

যে সমস্ত পুকুর থেকে এই গ্রামের মানুষ পানি পান করেন সেই পুকুরগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, পুকুরের চারপাশ অপরিস্কার, চারপাশে নেট দিয়ে ঘেরা নেই, পুকুরের ভিতরে হাঁস চলাফেরা করছে, প্রভৃতি। কিছু কিছু গ্রামবাসী পাশের গ্রামের নতুন চেয়ারম্যান বাড়ির কাছ থেকে পুকুরের পিএসএফ ফিল্টার থেকে পানি এনে পান করেন। হাতে গোনা কয়েকজন আবার নদী পার হয়ে পাশের ইউনিয়ন ভেটখালী থেকে পানি আনে। কিছু পরিবার আছে সচ্ছল তারা পানি কিনে খায়।

জয়াখালী গ্রামে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে নানান ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও খাবার পানির সমস্যা বিষয় নিয়ে তারা কোন কাজ করেনি।2-1 গ্রামের অনেক মানুষ নিজ উদ্যোগে আবার কখনো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খাবার পানির সমস্যা বিষয়ে সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে-কিন্তু তারা আজ কাল করে করে এখনো এ গ্রামে খাবার পানির সুষ্ঠু সমাধান, এমনকি কোন পুকুর পাড়ে একটি ফিল্টারও তৈরি করে দিতে পারেনি।

গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, এখানে অনেকের বাড়িতে মিষ্টি জলের পুকুর রয়েছে। কিন্তু সব পুকুরের পানিও খাওয়া যায় না। গ্রামে একটি বা দু’টি পুকুর ছাড়া আর কোন পুকুরের পানি পানের উপযোগি নয়। তারা আক্ষেপের স্বরে বলেন, “আর কতদিন এভাবে পুকুরের পানি সরাসরি পান করব? আমরা সুপেয় এবং নিরাপদ পানি চাই।

তাদের অন্য কোন দাবি দাওয়া নেই। তাদের একটাই দাবি অচিরেই যাতে সরকার বা অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাতে তাদের গ্রামের কিছু পুকুর খনন করে এবং পুকুরের পাড়ে ফিল্টার তৈরি করে দেয়। তাহলেই এই গ্রামের সকল অধিবাসী খুবই উপকৃত হবে। অন্যথায় সুপেয় পানির অভাবে এই গ্রামের অধিবাসীরা নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আক্রান্ত হবে। যা দীর্ঘ মেয়াদে রোগ-শোক জর্জরিত হয়ে আর্থিক সমস্যার সম্মূখীন হবে।

happy wheels 2

Comments