প্রাণবৈচিত্র্য দিবসে নিরাপদ পানির দাবি
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস। প্রতিবছরের ন্যায় সকল প্রাণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গুরুত্বের সাথে স্মরণ করে এই দিবসটি পুরো বিশ্ব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের উদপাযন করলেও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দাদুড় গ্রামে আয়োজিত “জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য সংকট বিষয়ক মতবিনিয়” অনুষ্ঠানে প্রাণের অস্তিত্বের প্রধান নিয়ামক পানির প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায়।
বরেন্দ্র অঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সবচেয়ে উচু স্থানের একটি গ্রাম দাদড়। আদিবাসী (সাওতাল) অধ্যুষিত এই গ্রামের প্রধান সমস্যা পানি। পুরো গ্রামে তিনটি টিউবওয়েল থাকলেও বছরজুড়ে একটি প্রায় নষ্টই থাকে। খরার কারণে পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাবার কারণে একটি কলস ভর্তি করতেই অনেক চাপ দিয়ে পানি তুলতে হয়। পানির ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয় ব্যবহারযোগ্য পানির। গ্রামে ২টি ছোট পুকুর আছে একটি ব্যক্তিকেন্ত্রিক আর একটি খাস কিন্ত সরকারিভাবে লিজ দেওয়া। ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুকুরে পানি শুকিয়ে গেলেও ডিপ টিউবওয়ের মাধ্যমে পানি তুলে আবার পুকুর ভরিয়ে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে এই পানির ব্যবহার সবাই করতে পারে না। লিজকৃত পুকুরে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মালিকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । পানি গোসলের জন্য ব্যবহার কারলেও অন্য কোন কারণে পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না।
লিজকৃত পুকুরে কার্পজাতীয় মাছ চাষ করার কারণে পানিতে অতিরিক্ত খাবার দেবার কারণে পানি ব্যবহারের অনুপয্ক্তু হয়ে পড়েছে। এই পানি ব্যবহার করে শরীরে চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে অতিরিক্ত খরার কারণে পানি শুকিয়ে গেছে। ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি ভর্তি করলেও পানি বেশি দিন থাকে। এমতাবস্থায় ব্যবহারযোগ্য পানির সমস্যায় পড়েছে দাদুড় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। বিশেষ করে গোসাল ও কাপড় ধোয়া গবাদি প্রাণীর ব্যবহারযোগ্য পানির সংকটে রয়েছে দাদুড় গ্রামের মানুষ।
এ প্রসঙ্গে কৃষাণী লক্ষ্মী মুর্মু বলেন, “আমাদের গ্রামে প্রধান সমস্যা পানি ,ছেলেরা গাও গোসল ডিপের পানি থেকে করতে পারলেও মেয়েদের গোসলের পানির ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়।” আরেকজন কৃষাণী প্রশান্তি মুর্মু বলেন, “পানির অভাবে আমরা অন্যান্য গ্রামের মেয়েরা যেমন সারাবছর নানা রকম সবজি আবাদ করে আমরা করতে পারিনা। আমরা হাঁস মুরগি পালন করতে পারি না।”
কৃষক যোগেশ মুর্মু বলেন, “আমাদের সকল কাজের জন্য পানি প্রয়োজন। গ্রামে নিয়মিতভাবে পানির জন্য একটি ডিপ টিউওয়েল দরকার । গ্রামে অনেকে এসে ডিপ টিউওয়েল এর প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও কেউ কোন উদ্যোগ নেয় না। গ্রামে যে একটি খাস পুকুর আছে সেটা আমরা নিজেরা চাষ করতে পারি না। সরকার থেকে অন্যজনকে লিজ দিয়ে দেয়।”
খরাপ্রবণ দাদুড় গ্রামে পানি সমস্যার জন্য এগিয়ে আসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসনসহ পানি নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো, এমন প্রত্যাশার কথাগুলো উঠে আসে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায়। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত হোক দাদুড় গ্রামের পানির নায্যতা এটাই আমাদের প্রত্যাশা।