চাটমোহরে তৈরি বেতের সামগ্রী যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা গ্রামের মৃত দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে শংকর চন্দ্র দাস। দুই বছর যাবত বেতের তৈরি হস্তশিল্প জাত দ্রব্যাদি তৈরি করে বিক্রি করে আসছেন। তার বাপ দাদা ও এ ব্যবসা করতো। মূলগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেন তিনি।
শংকর বলেন, “আমি নিজে বেতের কাজ করি। মা বেত চাছে আমি ফাটাই। বেতগুলো শ্রমিকদের কাজের উপযোগি করে দেই। এছাড়া আমার মা বেত ফার্নিচারে ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। তারা বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি তৈরি করেন। আমি সেগুলো ঢাকার ফার্মগেট এলাকার সান ট্রে অফিসে সরবরাহ করি। সেখান থেকে এ মালামাল গুলো চীন জাপান আমেরিকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যায়।” তিনি আরও বলেন, “গোল লন্ড্রি বাসকেট ২ হাজার ৬শ’ টাকা, থালা সেট ৪শ’ ৫০ টাকা, রাউন্ড ট্রে সেট ৭শ’ টাকা, ফুট কাপ প্রতি পিস একশ’ ৫০ টাকা, ডিম ঝুঁড়ি প্রতি পিস ৮শ’ টাকা, গোল চাকা সেট ৬শ’ ৫০ টাকা, স্কয়ার বক্স বাস্কেট সেট ৩ হাজার টাকা, ওভাল ট্রে সেট ৩ হাজার টাকা, স্কয়ার কিচেন সেট এক হাজার ২শ’ টাকা, গোল চারী প্রতি পিস ২শ’ ৫০ টাকা, ক্যান বল সেট ৮শ’ ৫০ টাকা, ডাব্বু সেট ৬শ’ টাকা, গোল স্যালেন্ডার সেট ৯শ’ টাকা ও পাল্লা সেট ৫শ’ টাকায় বিক্রি করি।”
‘মা বেত ফার্নিচারে’ কর্মরত শ্রমিক চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার মৃত জিতেন্দ্র দাসের ছেলে কার্তিক কুমার দাস (৬০) জানান, পনেরো বছর যাবত বেতের কাজ করে আসছেন তিনি। জমা জমি বা আয়ের অন্য কোন উৎস নেই তার। পনেরো বিশ দিন পর পর বাড়ি যান। দু’চার দিন থেকে ফের ছুটে আসেন চাটমোহরে। বেতের কাজ করতে। চুক্তিতে কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে চার থেকে পাঁচশ টাকা আয় করেন। এ টাকায় চলে ৬ সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ।
কারখানায় কর্মরত অপর শ্রমিক আলমডাঙ্গার জামজামি গ্রামের সুনীল দাস (৫৫) ৩৫ বছর যাবত বেত শিল্পের কাজ করে আসছেন। এ কারখানায় কাজ করেন ২ বছর যাবত। সুনীল দাস বলেন, “বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী। মাঝে মধ্যেই রক্ত দিতে হয়। কয়েক শতক বাড়ি ছাড়া মাঠাল কোন সয় সম্পত্তি নাই। ছেলে বাঁশের কাজ করে কিছু আয় করে। বেসরকারী সংস্থা থেকে ৮০ হার টাকা ঋণ নেয়া আছে। সংসার খরচ ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। এজন্য খাটতে হয় বেশি সময়। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করি। ছেলে, ছেলে বৌ, নাতিসহ পাঁচজন কোনমতে এক অন্নে বসবাস করছি।”
শংকর জানান, চাটমোহরের রেলবাজার (অমৃতকুন্ডা) হাটে কখনো যৎসামান্য বেত ওঠে। এলাকায় বেত পাওয়া যায় না। রাজবাড়ি জেলার পাংসা উপজেলা থেকে বেত কিনি। আকার ভেদে ৮০ পিস (১ পন) বেতের দাম পরে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। এক একটি বেতের দাম পরে ১৩ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া যানবাহন ভাড়াও লাগে। এটি আমার পৈত্রিক পেশা হলেও মাঝখানে বেত না পাওয়ায় কয়েক বছর বেতের কাজ করতে পারিনি। ৫ শতাংশ বাড়ি ছাড়া মাঠে কোন জমা জমি নাই। আমরা স্বামী স্ত্রী, মা, দুই বাচ্চাসহ ৫ জনের পরিবার বেত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তিনি আক্ষেপ করে জানান, চাটমোহরে পরিবেশবান্ধব বেত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।